বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২০, ২০২৫

২ রাকআত নামাজ পড়ার নিয়ম (একাকী)

বহুল পঠিত

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা সম্ভব, তবে কিছু ক্ষেত্রে নামাজে ত্রুটি বা অবহেলার কারণে কেউ পাপীও হতে পারে। যাদের নামাজ সঠিকভাবে আদায় করা হয় না, তারা ভয়াবহ জাহান্নামের শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন। তবে, একমাত্র সঠিকভাবে নামাজ আদায় করলেই আল্লাহর রহমত এবং পুরস্কার লাভ করা সম্ভব।

তাহলে, সঠিক নামাজ আদায়ের উপায় কী? কীভাবে আমাদের সালাত আদায় করা উচিত, যাতে আল্লাহর পুরস্কার লাভ হয় এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? এর সঠিক উত্তর আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবনাদর্শের মধ্যেই রয়েছে। তিনি বলেছেন:

“তোমরা সালাত আদায় করো সেভাবে, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ।” ( সহিহ বুখারী- ৬৩১)

রাসূল (সাঃ)-এর সালাত কেমন ছিল? তিনি কীভাবে নামাজ পড়তেন, কী কী নিয়ম এবং শর্ত তিনি অনুসরণ করতেন? এসব বিষয়েই আমাদের ধারাবাহিক আলোচনা হতে যাচ্ছে, যাতে আমরা তার অনুসরণ করে নিজের নামাজকে আরও সঠিক, সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ করতে পারি।

২ রাকাত একাকী নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এখানে।

তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জন

সালাত বা নামাজ আদায়ের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নামাজ শুরু করার আগে অবশ্যই ওযু করে পবিত্র হতে হবে, কারণ পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না। এটি আমাদের ধর্মীয় বিধান অনুসারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেমন হাদিসে এসেছে:  “পবিত্রতা/ তাহারাত ব্যতিরেকে সালাত কবুল হয় না।’’ (মুসলিম: ২২৪)

তবে যদি কোনো কারণে গোসল ফরয হয়ে থাকে (যেমন- গুনাহ, যৌন সম্পর্ক, মাসিক, বা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সন্তান প্রসব), তবে ওযু নয়, বরং সেক্ষেত্রে ফরয গোসল সম্পন্ন করা জরুরি। এর পরই আপনি নামাজে বসতে পারবেন।

ইসলামে পবিত্রতা অর্জন একটি অপরিহার্য বিষয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

পবিত্র থাকুন, কারণ পবিত্রতা আমলকে বরকতদায়ী করে এবং এটি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।”

এটি শুধু নামাজের জন্যই নয়, বরং জীবনের প্রতিটি আমলে পবিত্রতা অর্জন অপরিহার্য। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য এই পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ফরয, যাতে তাদের সকল আমল আল্লাহর কাছে কবুল হয়।

ওয়াক্ত হলে নামায আদায় করা

প্রত্যেক সালাত বা নামাজ অবশ্যই নির্ধারিত ওয়াক্ত-এর মধ্যে আদায় করা উচিত। তবে, আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো আউয়াল ওয়াক্ত, অর্থাৎ নামাজের শুরুর সময়েই তা আদায় করা। নামাজের প্রতি তাকওয়া বা সততা হল, আগে নামাজ এবং পরে কাজ—অথবা, আগে নামাজ এবং পরে সব কিছুই।

কিন্তু, যারা কাজকর্মকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নামাজ দেরিতে পড়ে, তাদের জন্য এক কঠিন সতর্কবার্তা রয়েছে। যারা নিয়মিত নামাজের সময়টি মিস করে এবং শেষ ওয়াক্তে তা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলে, তারা গাফেল (অবহেলা করা) হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন:

ঐসব নামাযীদের জন্য ওয়াইল বা ধ্বংস, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে গাফেল।
(সূরা মাউন, ১০৭: ৪-৫)

গাফেল হল সেই ব্যক্তি, যারা নামাজের সময়ের ব্যাপারে অবহেলা করে, নামাজ শেষ ওয়াক্তে পড়ে এবং হুকুম আহকাম ঠিকমতো অনুসরণ করে না। এ ধরনের গাফেল ব্যক্তি আল্লাহর পথে পূর্ণ মনোযোগী নয়, যার ফলে তাদের আমলও আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

এ কারণে, নামাজের প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত এবং শুরুর সময়েই তা আদায় করতে আমরা সদা চেষ্টা করবো, যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

কিবলামুখী হওয়া

রাসূল (সাঃ) নামাজের সময় পূর্ণ দেহসহ কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেন। নামাজের সময় পূর্ণ দেহসহ কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নামাজের একটি ফরজ, যা ইসলামের হুকুম অনুযায়ী পালন করতে হয়। (সূরা বাকারা: ১৪৪, মুসলিম ৩৯৭)

নামাজের ইকামাত

আযান ও ইকামাতের শব্দ প্রায় একই। এই শব্দগুলো ইকামাতে দু’বার বলা যেমন জায়েয (শরহে  মাআনীল আসার: ৭৬৪) তথাপি বেজোড় সংখ্যায় একবার বলাও সহীহ (বুখারী ৬০৫-৬০৭)। তবে (আল্লাহু আকবার) এবং (কাদ কা-মাতিস্ সলাহ) দু’বার বলতে হবে। একাকী নামায ও দ্বিতীয়  জামাআতেও ইকামাত দেওয়া সুন্নাত।

নামাজের নিয়ত

নিয়ত হলো নামাজের প্রথম শর্ত, যা অন্তর থেকে করা হয়। নামাজের শুরুতে আপনার মন ও অন্তর আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবদ্ধ থাকতে হবে। মুখে বা মনে মনে, নামাজের ধরন (যেমন ফজর, মাগরিব…) আল্লাহর উদ্দেশ্য ঘোষণা করতে হবে। উদাহরণ:

“আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ফজরের দুই রাকাত ফরজ সালাতের জন্য কেবলার দিকে মুখ করে দাড়ালাম সালাত শুরু করলাম”

নিয়ত ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। এটি একান্তই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা উচিত।

হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি: “প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভর করে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছে।” ( সহিহ বুখারি, ১)

তাকবীরে তাহরীমা

নামাজের শুরুতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার দু’হাত কখনো কাঁধের সমান আবার কখনো কান বরাবর উঠাতেন। এটি একটি সুন্নাত পদ্ধতি যা আবু দাউদ-এ বর্ণিত (৭২৮)। রাসূল (সাঃ) নামাজের শুরুতে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিয়েছেন ( বুখারি: ৭৩৭, ইফা: ৭০১)।

হাত তোলার সময় আঙুলগুলো সোজা রাখতে হবে এবং হাত কিবলামুখী করে রাখা উচিত।

নামাজে হাত বাঁধার নিয়ম

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর নামাযে বুকের উপর হাত রাখতেন। সাহাবী ওয়াইল বিন হুজুর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী (সাঃ)-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। আমি দেখেছি, তিনি (সাঃ) তাঁর বুকের উপরডান হাত বাম হাতের উপররেখেছেন.”
(সহীহ ইবনু খুযাইমা, পৃষ্ঠা ২, আবু দাউদ: ৭৫৯, আলবানী)

তবে, কিছু মুহাদ্দিস এবং আলেমরা বলেছেন যে, নাভির নিচে হাত বাঁধাও সুন্নাত, বিশেষত আবু দাউদ-এ (৭৫৬, ৭৫৮) এটি বর্ণিত হয়েছে।

সুতরাং, বুকের উপর হাত বাঁধা এবং নাভির নিচে হাত বাঁধা দুটি পদ্ধতি প্রমাণিত সুন্নাত এবং উভয়টি গ্রহণযোগ্য।

নামাজে চোখের দৃষ্টি কোথায় থাকবে

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর নামাযের বিভিন্ন অবস্থায় বিশেষভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। তিনি দাঁড়ানো রুকু অবস্থায় তাঁর দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখতেন, অর্থাৎ সিজদা কোথায় হবে, সেখানেই তাঁর চোখের দৃষ্টি থাকত। আর যখন তিনি বসতেন, তখন তিনি ডান হাতের শাহাদাত আঙুলের দিকে দৃষ্টি রাখতেন।
(সুনানে নাসাঈ: ১২৭৫, ১১৬০)

এছাড়া, রাসূল (সাঃ) নামাযে বা দুআয় আকাশের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন:

যারা নামাযে আকাশের দিকে তাকায়, তাদের দৃষ্টি আল্লাহ তাআলা ছিনিয়ে নেন.”
(মুসলিম: ৪২৮, ৪২৯)

এজন্য নামাযে বা দুআয় আকাশের দিকে তাকানো উচিত নয়। তাছাড়া, সামনে ইমামের দিকে তাকানো বা চোখ বন্ধ করে রাখা এ দুটি কাজও বৈধ নয়। নামাযের মধ্যে চোখের দৃষ্টি সঠিক জায়গায় রাখা এবং মনোযোগী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ছানা পড়া

১.

سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالِىْ جَدُّكَ وَلَا اِلَهَ غَيْرُكَ

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনার নাম অতি বরকতময়। আপনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং আপনি ছাড়া কোনো উপাসক নেই। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৩, ৮০৪; নাসায়ি, হাদিস: ৮৯৯, ৯০০)

অথবা

২.

اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ ‏”‏‏.‏

‘‘হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দাও যেমন ব্যবধান করেছ পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ আমাকে আমার গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।’’ (মুসলিম ৫/২৭, হাঃ ৫৯৮, আহমাদ ৭১৬৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৮)

আউযুবিল্লাহ পাঠ

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ  

উচ্চারণ: আউজুবিল্লাহিশ শাইতানির রাজিম

অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি

বিসমিল্লাহ পাঠ

بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ

অর্থ: পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।

নামাজে ফাতিহা পাঠ

বিসমিল্লাহ পাঠ করার পর সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সূরা ফাতিহা পাঠ করা ছাড়া কোন সালাত আদায় হয় না। সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরা তিনি (স.) প্রতি আয়াত  থেমে থেমে পড়তেন। যেমন , বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম অতঃপর থামতেন, আলহামদুলিল্লাহ হি রাব্বিল আলামিন আবার পড়তেন, আর রাহমানির রাহিম অতঃপর থামতেন, আবার পড়তেন, মালিকি ইয়াওমিদ্দিন তারপর থেমে আবার পড়তেন। এভাবে প্রতি আয়াত শেষে থেমে থেমে পূর্ণ সূরাটি পাঠ করতেন। (আবু দাউদ: ৪০০১, ইবনে মাজাহ:৮৬৭) উল্লেখ্য, সালাতে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার পঠিত সূরা ফাতিহার প্রতিটি আয়াতের জবাব দিয়ে থাকেন (সুবহানাল্লাহ)। (মুসলিম: ৩৯৫)

নামাজে কিরাআত পাঠ

সূরা ফাতিহা পাঠ করে আমীন বলার পর একটু চুপ থেকে (সাকতা করে) কুরআন থেকে তিলাওয়াত করতে হবে।

১. সকল প্রকার সালাতের প্রথম দু’রাকআতে ফাতিহা পাঠের পর অপর একটি সূরা পড়বে, অথবা কোন সূরার অংশবিশেষ পড়বে।
২. আর তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার পর রাসূলুল্লাহ (স.) কখনো সূরা মিলাতেন, আবার কখনো মিলাতেন না।
৩. প্রথম রাকআতে সূরা পাঠ তুলনামূলকভাবে একটু দীর্ঘায়িত করতেন।
৪. যোহর ও আসরের সালাতে ইমামের পেছনে প্রথম দু’রাকআতে মুক্তাদীগণও সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে পারে। আবার শুধু ফাতিহা পাঠ করেও ক্ষান্ত হতে পারে।
৫. একই রাকআতে সূরার অংশবিশেষ বা পূর্ণ সূরা বা একাধিক সূরা পাঠ করা জায়েয।

নামাজে রুকুতে যাওয়ার নিয়ম

সূরা পাঠ শেষ হলে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (স.) সামান্য পরিমাণ সময় চুপ থেকে দম নিতেন। অতঃপর রুকুতে যেতেন এবং রুকূতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন।(আবু দাউদ: ৭৭৮) রুকুতে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (স.) পুনরায় দু’হাত কাঁধ বা কান বরাবর উঠাতেন। রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় সাহাবায়ে কেরামও এভাবে দু’হাত উঠাতেন। (বুখারী: ৭৩৬-৭৩৮, ইফা ৭০০-৭০২, আধুনিক ৬৯২৬৯৪, মুসলিম: ৩৯১)

রুকুর পদ্ধতি

রুকুতে রাসূলুল্লাহ (স.) হাঁটুতে হাত রাখতেন এবং তাঁর পিঠ সোজা করে রাখতেন। অর্থাৎ মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত তাঁর পিঠটা মাটির সমান্তরালে এমনভাবে সোজা করে রাখতেন, যেন তাঁর উপর পানি রাখলেও ঐ পানি সমান উচ্চতায় স্থির হয়ে থাকবে।(ইবনে মাজাহ: ৮৭২)

রুকু অবস্থায় হাত: হাঁটুতে হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক ফাঁক করে রাখবে।(আবূ দাউদ: ৭৩১)

রুকুর তাসবীহ

রুকুতে তিনি (ক) নিমোক্ত তাসবীহ তিন বা ততোধিক বার পাঠ করতেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম ‘আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।’ (খ) তিনি কখনো কখনো রুকুতে এ দু’আও পড়তেন, ‘‘সুবহানা যিল্ জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়ালআযমাতি’’
“হে দুর্দান্ত প্রতাপশালী, রাজত্ব, অহংকার ও বড়ত্বের মালিক আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি।” (আবু দাউদ: ৮৭৩) যে ব্যক্তি রুকু ও সিজদা পরিপূর্ণভাবে আদায় করে না রাসূলুল্লাহ (স.) ঐ ব্যক্তিকে সালাত চোর বলে আখ্যায়িত করেছেন। (ইবনু আবী শাইবা- ১/৮৯/২)

রুকু থেকে ওঠার নিয়ম

অতঃপর রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর রাসূলুল্লাহ (স.) তাকবীরে তাহরীমার মতোই তাঁর দু’হাত কাঁধ (বা কান) বরাবর উঠাতেন। এ কাজকে আরবীতে ‘রাফউল ইয়াদাইন’ বলা হয়। তবে সিজদা করার সময় রাফউল ইয়াদাইন’ করতেন না। (বুখারী: ৭৩৫, ইফা ৬৯৯, আধুনিক ৬৯১; মুসলিম: ৩৯০)
রুকু থেকে উঠার নাম কাওমা। রুকুতে রাসূলুল্লাহ (স.) যে পরিমাণ সময় ব্যয় করতেন রুকু থেকে উঠার পর তিনি প্রায় সেই পরিমাণ বা তার কাছাকাছি সময় পরিপূর্ণ সোজা হয়ে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেন। (বুখারী: ৭৯২, ইফা ৭৫৬, আধুনিক ৭৪৮)


রুকু থেকে উঠার পর দুআ

রুকূ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী সালাত আদায়কারী সকলেই বলতেন, রাব্বানা লাকাল হামদ , “হে আমাদের রব! তোমারই জন্য সকল প্রশংসা।” (সহিহ বুখারী: ৭৪৫)।
অথবা, রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু, হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি

“হে আমাদের রব! তোমারই জন্য অধিক বরকতময় ও উত্তম প্রশংসা।” (বুখারী: ৭৯৯, ইফা ৭৬৩, আধুনিক ৭৫৫)

সিজদায় যাওয়ার নিয়ম/পদ্ধতি

রাসূলুল্লাহ (স.) সিজদায় যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মাটিতে হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখবে।(আবু দাউদ: ৮৪০, নাসাঈ: ১০৯৪, হাদীসটি সহীহ)। অন্য হাদীসে এসেছে, তিনি আগে দুই হাঁটু মাটিতে রাখতেন (আবু দাউদ: ৮৩৮, ৮৩৯)।

সিজদা করার পদ্ধতি

রাসূলুল্লাহ (স.) সিজদারত অবস্থায় হাতের তালু মাটিতে বিছিয়ে রাখতেন (বুখারী: ৮২৮, ইফা ৭৯০, আধুনিক ৭৮২)। সাতটি অঙ্গের উপর ভর দিয়ে সিজদা করতেন (বুখারী: ৮১২, মুসলিম: ৪৯০)।
 যেমন-
১.  কপাল ও নাক [তিনি (স.)] হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে নাককে কপালের অন্তর্ভুক্ত করেন) [বুখারী: ৮১২], ইফা ৭৭৫, আধুনিক ৭৬৭।
২. দুই হাত
৩. দুই হাঁটু
৪. দুই পায়ের আঙুলসমূহের অগ্রভাগ। কপালের মতো নাকও মাটিতে রাখতে হবে। তিনি (স.) হাতের আঙুলগুলো সোজা করে নরমভাবে কিবলামুখী করে রাখতেন। দুই পায়ের গোড়ালি একত্রে ভালোভাবে মিলিয়ে রাখতেন (সহীহ ইবনে খুযাইমা: ৬৫৪)। সে সময় রাসূল (স.)-এর মুখমণ্ডল তাঁর দুই হাতের মধ্যবর্তী স্থানে কাধ বা কান বরাবর রাখতেন এবং হাতের কজি থেকে কনুই পর্যন্ত তার বাহু যমীন থেকে উপরে উঠিয়ে রাখতেন। সাবধান! কুকুরের মতো কনুই পর্যন্ত হাত দুটো যমীনে বিছিয়ে দেবে না (বুখারী: ৮২২, আধুনিক ৭৭৬)।

সিজদার তাসবীহ

সিজদায় রাসূল (স) সিজদায় তাসবীহটি পড়েছেন, সুবহানা রব্বিয়াল লা – “আমি আমার সুউচ্চ মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।”

সিজদার দুআ

সিজদা অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হন। তাই রাসূলুল্লাহ (স.) সে সময় বেশি বেশি দু’আ করতে বলেছেন (মুসলিম: ৪৮২)। রাসূলুল্লাহ (স.) বহু ধরনের দু’আ করতেন। তন্মধ্যে নিয়ে একটি দু’আ উল্লেখ করা হলো:

আল্লাহুম্মাগফির লী যাম্বী কুল্লাহু; দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আউয়ালাহু ওয়াআখিরাহু, ওয়াআলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু

“হে আল্লাহ! আমার সব গোনাহ তুমি ক্ষমা করে দাও, হোক তা ছোট বা বড়, আগের বা পরের, প্রকাশ্য বা গোপন ।” (মুসলিম: ৪৮৩)

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে সময়ের পরিমাণ

সিজদায় যে পরিমাণ সময় ব্যয় করবে এখানেও প্রায় সে পরিমাণ সময় লম্বা করবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (স.)-এর রুকু, সিজদা, দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর পরবর্তী কিয়ামের সময়ের পরিমাণ প্রায় সমান সমান বা তার কাছাকাছি ছিল। (বুখারী: ৭৯২, ইফা ৭৫৬, মুসলিম: ৪৭১)

দু’ সিজদার মাঝে দুআ পড়া

সিজদার থেকে উঠে বসা পর অর্থাৎ দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ের বৈঠকে আল্লাহর রাসূল (স) নিম্নবর্ণিত দুআ পড়তেন,

আল্লাহুম্মাগফির লী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াআফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফানী

“হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি রহম কর, আমাকে হেদায়াত দাও, আমাকে সুস্থ ও নিরাপদে রাখ এবং আমাকে রিযক দান কর।” (আবু দাউদ: ৮৫০)।

দ্বিতীয় সিজদা

আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে এবং প্রথম সিজদার ন্যায় তাসবীহ ও দুআ পড়তে হবে। (বুখারী: ৮২৫, ইফা ৭৮৭, আধুনিক: ৭৭৯)

সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর নিয়ম

: আল্লাহু আকবার বলে প্রথমে হাত পরে হাঁটু উঠাবে অথবা, মাটিতে হাতের উপর ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াবে। উভয়ই জায়েয।(আবু দাউদ: ৮৪০)

দ্বিতীয় রাকআতের পদ্ধতি

প্রথম রাকআত ছাড়া পরবর্তী কোন রাকআতে আর ছানা পড়তে হয় না এবং আউযুবিল্লাহ পড়ারও দরকার নেই। তবে প্রতি রাকআতেই সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব। আর বাকি সব। নিয়ম-কানুন প্রথম রাকআতের মতোই। তবে প্রথম রাকআতের তুলনায় দ্বিতীয় রাকআতের কিরাআত ছোট পড়া  ভালো। (মুসলিম: ৪৫১)

দ্বিতীয় রাকআতের পর বৈঠক

দুই রাকআত নামায শেষে রাসূলুল্লাহ (স.) আল্লাহু আকবার বলে সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে পুরোপুরি সোজা হয়ে বসতেন। সে সময় বাম পা বিছিয়ে এর উপর বসতেন এবং ডান পা খাড়া করে (পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে) বসতেন। বসা অবস্থায় দুই হাত উরুতে রাখতেন (নাসাঈ: ১২৬৪; তিরমিযী: ২৯২)।

বৈঠকে বসা অবস্থায় যা পড়তে হয়

প্রথমে আত্তাহিয়্যাতু, এরপর দরূদ শরিফ, তারপর দু’আয়ে মাছুরা এবং সম্ভব হলে একাধিক দু’আ মাছুরা পড়বে। রাসূলুল্লাহ (স) এভাবেই করেছেন (বুখারী: ৮৩১, ৮৩৪, ১৩৭৭, ৩৩৭০ইফা ৭৯৩, আধুনিক ৭৮৫) (ইফা ৭৯৫, আধুনিক ৭৮৭)  

বসা অবস্থায় আঙুল রাখার পদ্ধতি

বাম হাত বাম উরুর উপর রেখে আঙুলগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখবেন আর ডান হাত ডান উরুর উপর রেখে ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা এ দুটি আঙুল গুটিয়ে এনে বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙুল দুটির মাথা একত্র করে গোলাকার বৃত্তের মতো করে ধরে রাখবেন এবং শাহাদাত আঙুলটি তখন মৃদুভাবে নাড়াবেন।

সালাম ফেরানো

অতঃপর ডানে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে দান দিকে মুখ ঘুড়াবে এরপর বামে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে মুখ ফিরিয়ে নামাজ সমাপ্ত করবে।

ভুল ত্রুতি হলে ক্ষমা করবেন। আর অবশ্যই কুরআন ও হাদিস যাচাই বাচাই করে কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে সঠিক ভাবে সালাত আদায় করবেন। নির্ভরযজ্ঞ আলেমদের মতামত অনুসারে সালাত আদায় করবেন।
হে আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে সঠিক ভাবে সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

সোর্স: hadithbd.com ও অন্যান্য সূত্রসমুহ।

আরো পড়ুন

ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম – সুন্দর অর্থসহ সেরা নামের তালিকা

বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম পরিবারগুলোতে সন্তানের জন্য সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখার আগ্রহ সর্বদা ছিল এবং থাকবে। বিশেষ করে ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম খোঁজার ক্ষেত্রে অভিভাবকরা বেশ সচেতন থাকেন, কারণ নাম শুধু পরিচয়ের নয়—এটি চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের একটি ইতিবাচক প্রতিফলন।

সূরা ফীল বাংলা উচ্চারণ, আরবি, অর্থ, তাফসীর ও ফজিলত – সম্পূর্ণ গাইড

ইসলামের ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা আছে, যা মানুষের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। সূরা ফীল ঠিক সেই ধরনের একটি সূরা। মাত্র পাঁচ আয়াতের হলেও এতে আছে আল্লাহর কুদরতের জীবন্ত প্রমাণ, অহংকারের কঠিন পরিণতি এবং দুর্বলের প্রতি আল্লাহর বিশেষ সুরক্ষা।

সূরা কদরের বাংলা অর্থ ও উচ্চারণ: লাইলাতুল কদরের মহিমা, আমল ও ফজিলত

পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরা গুলোর মধ্যে সুরা কদর একটি। এই সূরা মূলত লাইলাতুল কদরের রাতের মহিমা এবং কুরআন নাজিল হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে। এই লেখায় সূরা কদরের বাংলা অর্থ ও উচ্চারণ, ফযিলত সহ সবকিছু জানব।
- Advertisement -spot_img

আরও প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ প্রবন্ধ