বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

কাঠিন চীবরের দীপশিখা: প্রবারণা পূর্ণিমায় আকাশছোঁয়া ফানুস

বহুল পঠিত

আজ ৫ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য এটি একটি বিশেষ দিন (প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব ২০২৫) । আকাশজুড়ে ফানুসের আলো, মন্দির ও বিহারে মঙ্গল শোভাযাত্রা-সব মিলিয়ে উদযাপিত হচ্ছে প্রবারণা পূর্ণিমা

এই দিনটি শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়। এটি ত্যাগ, পুণ্য আর আত্মশুদ্ধির এক মহামিলন

প্রবারণা পূর্ণিমা কী?

‘প্রবারণা’ শব্দটি এসেছে পালি ভাষা থেকে। এর অর্থ ‘নিষেধ’ বা ‘বর্জন’। এই দিনে ভিক্ষুরা তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষ করে নিজেদের ভ্রান্তি ও অনুশাসন লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিশ্বাস করা হয়, এদিনই গৌতম বুদ্ধ স্বর্গলোক থেকে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করেন। তাই একে ‘দেবদ্বারা পূর্ণিমা’ও বলা হয়।

কাঠিন চীবর দান: আত্মত্যাগের প্রতীক

প্রবারণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার হলো কাঠিন চীবর দান
‘চীবর’ হলো ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র। আর ‘কাঠিন’ মানে কঠিন বা দুর্লভ। এই দান এত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি প্রবারণার পরবর্তী এক মাসের মধ্যে তৈরি ও দান করতে হয়। এত কম সময়ে এটি প্রস্তুত করা কঠিন, তাই এর নাম ‘কাঠিন’ চীবর দান।

এই দানে অংশ নিয়ে মানুষ লোভ, হিংসা ও আসক্তি ত্যাগ করে। এটি শুধু বস্ত্র দান নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক চর্চা। এটি সহমর্মিতা, ত্যাগ ও সমাজে শান্তির বার্তা দেয়।

ফানুস উৎসব: আলোর পথে যাত্রা

প্রবারণা পূর্ণিমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো আলোয় ভরা ফানুস উৎসব। সন্ধ্যায় বিহার ও মন্দির থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় শত শত রঙিন ফানুস। আকাশে ওড়া এই ফানুস কেবল চোখের আরাম নয়, এর পেছনে রয়েছে গভীর তাৎপর্য।

প্রত্যেকটি ফানুস মানুষের দুঃখ, কষ্ট আর পাপ নিয়ে আকাশে ভেসে যায়। এটি যেন এক ধরনের মুক্তির প্রতীক।

ফানুস আমাদের শেখায়-আলোই সত্য, অন্ধকারের ওপারেই শান্তি

বাংলাদেশে প্রবারণা পূর্ণিমার উদযাপন

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল যেমন রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং ঢাকা, চট্টগ্রামের বিহারগুলোতে এই দিনটি জাঁকজমকভাবে পালিত হয়। লোকজন উপবাস করেন, প্রার্থনা করেন এবং দান-দক্ষিণা দেন। সন্ধ্যায় মঙ্গল শোভাযাত্রা ও ফানুস উৎসব এই দিনটিকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।

প্রবারণার বার্তা: ত্যাগ থেকে শান্তির পথে

প্রবারণা পূর্ণিমা আমাদের মনে করিয়ে দেয়-ত্যাগেই শান্তি। এই উৎসব সহিংসতা নয়, অহিংসার বার্তা দেয়। এটি আমাদের শিক্ষা দেয়-আত্মশুদ্ধি, দয়া ও সহানুভূতির মাধ্যমেই সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব

আলোয় ভরা ফানুসের মতো, আমাদের হৃদয়েও আলো জ্বালাতে হবে, যাতে অন্ধকার দূর হয়- নিজের ভেতর থেকে, সমাজ থেকেও।

প্রবারণা পূর্ণিমার শুভেচ্ছা

এই পবিত্র প্রবারণা পূর্ণিমায়
আপনার জীবনে আসুক শান্তি, সুখ আর সমৃদ্ধি।
সবার জন্য রইলো প্রণাম ও শুভ কামনা।

আরো পড়ুন

আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধর্মপ্রাণদের মিলন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ধর্মীয় ঐক্য ও শিক্ষা প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করল। সকাল নয়টার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এই মহাসম্মেলন সারা দেশ থেকে আগত মানুষের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

আলেমদের অবদান: সমাজ গঠনে তাদের অমূল্য ভূমিকা

বাংলাদেশে গুণীজনদের অবহেলা একটি দুঃখজনক বাস্তবতা, বিশেষত আলেমদের প্রতি। অথচ, সমাজ গঠনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। শৈশব থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জন্য আলেমদের রয়েছে নানামুখী কর্মসূচি।

বাংলাদেশের সাতটি প্রধান শহরাঞ্চল: অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু

বাংলাদেশের প্রগতি ও সার্বিক উন্নয়নের গল্প মূলত তার বিভিন্ন শহরাঞ্চলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো কেবল জনসংখ্যার ঘনত্বের কেন্দ্র নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ঐতিহ্যের ধারক। প্রতিটি বড় শহরের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব, যা সারা দেশের জন্য অনন্য অবদান রাখে। রাজধানী থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শিক্ষার আঁতুড়ঘর কিংবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, সবই মিলেমিশে একটি বৈচিত্র্যময় চিত্র তৈরি করেছে। এসব প্রধান নগর কেন্দ্রগুলোর পরিচিতি জানা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বোঝার জন্য অপরিহার্য।
- Advertisement -spot_img

আরও প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ প্রবন্ধ