পরিচিতি ও ইতিহাস
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি সরকারী অর্থায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যা ঢাকার দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। তবে এর ইতিহাস প্রায় ১৫৬ বছর; এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং ১৮৭২ সালে কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর উদ্যোগে ‘জগন্নাথ স্কুল’ নামে পরিচিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশাত্মবোধক আন্দোলনে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালের আইন-২০০৫ এর মাধ্যমে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়।
বর্তমান অবস্থা ও অর্জন
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সাতটি অনুষদ, ৩৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রায় ১৬,৮৪৩ জন শিক্ষার্থী এবং ৬৬৫ জন শিক্ষক শিক্ষাদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থায় উন্নতির অংশ হিসেবে সম্প্রতি প্রতিটি বিভাগে ফাইবার-অপটিক ব্যাকবোনের মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। শেখা-গবেষণার পাশাপাশি ছাত্রজীবন সমৃদ্ধ করতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আবৃত্তি-ডিবেট ক্লাব, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, রোভার-রেঞ্জার ইউনিটসহ বহু সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক সোসাইটি রয়েছে।
নির্দিষ্ট কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং সঠিক সময়ে ক্লাস শুরু করেছে। পরিত্যক্ত দুটি অধ্যয়ন ভবন পুনরায় চালু করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য বিধি প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অস্থায়ী ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাংকিং-২০২২ অনুসারে রসায়ন বিষয়ে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা জাতীয় প্রতিযোগিতায় নিয়মিত শীর্ষস্থান দখল করছে, যা প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা আরও উজ্জ্বল করছে। উপাচার্য রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ২০ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের একটি হয়ে উঠেছে এবং শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।
সমস্যা ও সম্ভাবনা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাস আয়তন অত্যন্ত সীমিত; মূল ক্যাম্পাসে বর্তমানে মাত্র ৭.৫ একর জমি রয়েছে। জায়গা সংকুলান ও আবাসনের অভাব সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে চলছে; এসব সমস্যার সমাধানে অস্থায়ী হল নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে কেরানীগঞ্জের তেঘুরিয়ায় ২০০ একর জমিতে নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন ক্যাম্পাসের মাস্টারপ্ল্যান শিক্ষকদের পরামর্শে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে তৈরি করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত চাহিদা পূরণ হওয়ার প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নতুন ক্যাম্পাস উন্নয়নের অংশ হিসেবে সম্প্রতি ‘পরিকল্পনা ও প্রকৌশল’ অনুষদের ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা লাইব্রেরি, আধুনিক গবেষণাগার এবং শিক্ষার্থী আবাসিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা এবং উদ্ভাবনী গবেষণা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। শিক্ষানুরাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য সীমিত সম্পদের মধ্যেও ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছেন; বর্তমানে নতুন ক্যাম্পাসের উন্নয়ন প্রকল্পে এগিয়ে চলছে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীরা আশা করছে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জন্য আধুনিক শিক্ষা সুযোগ এবং সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস জীবন নিশ্চিত করবে। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আধুনিক ল্যাব, তথ্য-প্রযুক্তি সুবিধা ও ক্যারিয়ার সাপোর্ট সেন্টার গড়ে তুলছে। পাশাপাশি আলোকচিত্র, সংগীত ও উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতাসহ বহু সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বহুমুখী বিকাশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই সব প্রেক্ষিতে নতুন শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে তাদের মেধা বিকাশের এবং ক্যারিয়ার তৈরির ভালো পরিবেশ আশা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও এই প্রত্যাশাগুলো পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের গর্ব হয়ে থাকবে।
সোর্স: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল তথ্য ও সাম্প্রতিক সংবাদ-সমীক্ষা




