বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় ঐতিহাসিক এই আইনে গুমের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন পায়।
গুম প্রতিরোধ আইন ২০২৫-এর মূল বৈশিষ্ট্য
১. গুমকে প্রথমবারের মতো আইনি সংজ্ঞায় আনা হয়েছে।
২. গুমের অপরাধকে চলমান অপরাধ (Continuing Offense) হিসেবে বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
৩. গোপন আটক কেন্দ্র বা ‘আয়নাঘর’ স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে।
৪. জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও গুম তদন্ত কমিশন উভয় প্রতিষ্ঠানকেই গুম সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
5. গঠিত হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, যেখানে অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
6. ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর আইনি সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ, এবং বিনামূল্যে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।
7. গুম প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিশেষ তহবিল ও জাতীয় তথ্যভাণ্ডার গঠনের বিধান যুক্ত হয়েছে।
প্রেস সচিবের বক্তব্য
প্রেস সচিব বলেন, “গুম প্রতিরোধ আইন ২০২৫ বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবাধিকার সুরক্ষায় এক মাইলফলক। অতীতে গুমের মতো ভয়াবহ অপরাধের শিকার হয়েছেন হাজারো মানুষ। এই আইন কার্যকর হলে ভবিষ্যতে কোনো সরকারই আর গুমের রাজত্ব কায়েম করতে পারবে না।”
তিনি আরও জানান, পূর্ববর্তী সরকারের সময় হাজারো মানুষ গুম হয়েছেন এবং গুম প্রতিরোধ কমিশনে ২ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। বাস্তব সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে জানান তিনি।
আইনের গুরুত্ব
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই আইনকে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। আইনটি কার্যকর হলে গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে দ্রুত বিচার ও দায়মুক্তি রোধের পথ খুলে যাবে।




