বাংলাদেশের প্রবাসীরা এবার প্রথমবারের মতো ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশ থেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ধাপটি আলোচিত হলেও এবার এটি কার্যকর হচ্ছে। এই গাইডে আমরা বিস্তারিতভাবে দেখাবো প্রবাসীদের ভোট দেয়ার নিয়ম একেবারে নিবন্ধন থেকে শুরু করে ভোট প্রদান ও ফেরত পাঠানো পর্যন্ত সব ধাপ।
প্রবাসী ভোটারের নিবন্ধন প্রক্রিয়া
প্রবাসীরা ভোট দিতে হলে প্রথমে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে।
- গুগল প্লে স্টোর বা আইফোন অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
- নিবন্ধনের জন্য আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর এবং জিও লোকেশন চালু থাকা বাধ্যতামূলক।
- মোবাইল নম্বরে আসা ওটিপি দিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং ভোটারের ছবি আপলোড করতে হবে।
- ফেসিয়াল রিকগনিশন যাচাই করতে হবে: NID-এ থাকা ছবির সাথে ভোটারের মুখের মিল ৭০% হতে হবে।
- যদি থাকে, পাসপোর্টের তথ্যও দিতে হবে।
নোট: বাংলাদেশ থেকে এই অ্যাপ ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাসীদের ভোট দেয়ার নিয়ম
নিবন্ধনের পর ঠিকানায় ব্যালট পেপার পাঠানো হবে, যা পূরণ করে রিটার্ন করতে হবে। ভোট বৈধ গণ্য হবে নির্বাচনের দিন বিকাল ৪টার মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছালে। পুরো প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন ও ডাক বিভাগের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে, যাতে প্রবাসীরা ঘরে বসে ভোট দিতে পারেন।
প্রবাসী-ভোটার-গাইড-নির্বাচন-কমিশন.pdf
ব্যালট প্রেরণ ও ভোট প্রদান
- নিবন্ধনের পরে প্রবাসীর ঠিকানায় ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।
- ব্যালটে থাকবে সব রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক, এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট।
- ব্যালট হাতে পেলেও ভোট দেওয়ার জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর অ্যাপের মাধ্যমে নিজের আসনের প্রার্থী তালিকা দেখতে হবে।
- ভোট প্রদানের পর ব্যালট রিটার্ন খামে ভরে পোস্ট অফিসে পাঠাতে হবে।
প্রতিটি ব্যালটের খরচ: ৭০০ টাকা।
ব্যালট ফেরত পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৫–৩০ দিন।
ব্যালট রিটার্ন ও বৈধ ভোট
- ব্যালটের সাথে একটি ঘোষণাপত্র থাকবে, যেখানে ভোটারকে স্বাক্ষর করতে হবে।
- ঘোষণা ছাড়া ব্যালট ফেরত দিলে ভোট বাতিল গণ্য হবে।
- জাতীয় নির্বাচনের দিন বিকাল ৪টার মধ্যে যে ব্যালট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাবে, তা বৈধ ভোট হবে।
প্রবাসী ভোটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ভোটাররা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ভোটের অবস্থা ট্র্যাক করতে পারবে।
- যদি কোনো প্রার্থী বাদ পড়ে বা পুনর্বাসন পায়, প্রবাসীর ভোট সেই আসনে বাতিল হবে।
- ডাক বিভাগের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ব্যালট ট্র্যাকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
উপসংহার
প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ এখন আরও সহজ ও নিরাপদ। সঠিক নিয়ম মেনে নিবন্ধন ও ভোট প্রদান করলে প্রবাসীরা দেশের নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে থাকা প্রবাসীরা এখন ঘরে বসেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
প্রবাসী ভোট সংক্রান্ত – FAQ (উত্তরসহ)
প্রশ্ন: প্রবাসী ভোটার সংখ্যা কত?
উত্তর: এখন পর্যন্ত ১৭,৩৬৭ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন ইসির অধীনে। তবে ইসির লক্ষ্য প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসীকে ভোটার হিসেবে যুক্ত করা, যা সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন: প্রবাসী বাংলাদেশিরা কবে থেকে ভোট দিতে পারবেন?
উত্তর: প্রবাসীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ এ প্রথমবার ভোট দিতে পারবেন। ভোট প্রদানের জন্য নিবন্ধন শুরু হবে নির্দিষ্ট অ্যাপে।
প্রশ্ন: প্রবাসী ভোটের কোন অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে?
উত্তর: প্রবাসী ভোটাররা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন ও ভোট প্রদান করবেন।
প্রশ্ন: কোন অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীরা ভোটার নিবন্ধন করবেন?
উত্তর: প্রবাসীরা ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ব্যবহার করে ভোটার নিবন্ধন করবেন, যা গুগল প্লে স্টোর ও আইফোন অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: প্রবাসী ভোটারের জন্য আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর কি বাধ্যতামূলক?
উত্তর: হ্যাঁ, নিবন্ধনের জন্য আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা আবশ্যক।
প্রশ্ন: প্রবাসীদের ভোটার হতে কি কি লাগে ?
উত্তর: আন্তর্জাতিক মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), ভোটারের ছবি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পাসপোর্টের তথ্য।
প্রশ্ন: জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কি প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবে?
উত্তর: না, ভোটার নিবন্ধনের জন্য NID প্রয়োজন, কারণ ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে মিল করতে হয়।
প্রশ্ন: পাসপোর্ট কি সকল প্রবাসী ভোটারের জন্য বাধ্যতামূলক?
উত্তর: না, পাসপোর্টের তথ্য বাধ্যতামূলক নয়। যারা আছে তারা দিতে পারেন।
প্রশ্ন: নিবন্ধন শেষে ব্যালট কিভাবে প্রেরণ করা হবে?
উত্তর: নিবন্ধনের ঠিকানায় বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যালট পাঠানো হবে।
প্রশ্ন: ব্যালট রিটার্ন করতে কত সময় লাগতে পারে?
উত্তর: ডাক বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ব্যালট প্রেরণ থেকে ফেরত আসা পর্যন্ত ১৫–৩০ দিন সময় লাগতে পারে।
প্রশ্ন: প্রবাসী ভোটাররা কবে ভোট দিতে পারবে?
উত্তর: প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরই ভোটাররা ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
প্রশ্ন: ব্যালটে কি সব রাজনৈতিক দলের প্রতীক থাকবে?
উত্তর: হ্যাঁ, ব্যালটে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক থাকবে।
প্রশ্ন: প্রবাসী ভোটাররা কি না ভোট দিতে পারবেন?
উত্তর: হ্যাঁ। প্রবাসী ভোটাররা ‘না’ ভোট দিতে পারবেন।
প্রশ্ন: ভোট দেওয়ার পরে ব্যালট কাকে ফেরত দিতে হবে?
উত্তর: ভোটাররা ব্যালট রিটার্ন খামে পূরণ করে নির্দিষ্ট পোস্ট অফিসের মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন।
প্রশ্ন: ভোট যদি সময়মতো পৌঁছানো না যায়, কি হবে?
উত্তর: নির্বাচনের দিনে বিকাল ৪টার আগে না পৌঁছালে ভোটটি বাতিল গণ্য হবে।
প্রশ্ন: প্রবাসী ভোটারের জন্য ভোটের খরচ কত?
উত্তর: ভোটার প্রতি খরচ ৭০০ টাকা ধরা হয়েছে, যা ডাক বিভাগের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
প্রশ্ন: জিও লোকেশন ছাড়া কি বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধন করা যাবে?
উত্তর: না, অ্যাপের জিও লোকেশন চালু থাকার কারণে বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধন করা যাবে না।
প্রশ্ন: ভোট দেওয়ার জন্য কি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক?
উত্তর: হ্যাঁ, ব্যালটের সঙ্গে দেওয়া ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না করলে ভোট বাতিল গণ্য হবে।
প্রশ্ন: প্রার্থী বাতিল হলে প্রবাসী ভোট কি বৈধ হবে?
উত্তর: না, যদি প্রার্থী বাতিল বা আপিলের কারণে পুনর্বাসন ঘটে, প্রবাসী ভোটও বাতিল হবে।
প্রশ্ন: প্রবাসীরা ঘরে বসেই কিভাবে ভোটের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারবে?
উত্তর: ডাক ও নির্বাচনের ব্যালট ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে ভোটাররা নিজের ব্যালট কোথায় আছে তা দেখতে পারবেন।




