টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ও আয়কর কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি শুধুমাত্র ব্রিটিশ নাগরিক। এবার তার বিরুদ্ধে আরও বিস্তৃত প্রমাণ উঠে এসেছে যা তার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং আর্থিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে নিয়মিত আয়কর দাখিল করেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, তিনি ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। রিটার্নে “ব্যবসা/পেশা” খাত থেকে আয় দেখালেও নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসার তথ্য সেখানে নেই, কেবলমাত্র একবার “মাছের ব্যবসার” উল্লেখ পাওয়া যায়।
আয়কর বিবরণীতে ফাঁকফোকর
আয়কর নথিতে দেখা যায়, টিউলিপ সর্বোচ্চ আয় দেখিয়েছেন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে- প্রায় ৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা। অথচ তার মালিকানাধীন গুলশানের একটি ২৪৩৬ বর্গফুট ফ্ল্যাট, যা একটি আবাসন কোম্পানি থেকে পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে, সেটির কোনো উল্লেখই তার কর বিবরণীতে নেই। এই ফ্ল্যাট এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের আওতায়।
ফ্ল্যাট বিতর্ক ও ঘুষের অভিযোগ
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে ‘ইস্টার্ন হারমনি’ প্রকল্পের একটি ফ্ল্যাট কিভাবে টিউলিপের নামে রেজিস্ট্রি হলো, তা নিয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রশ্ন। অভিযোগ উঠেছে, তার খালা শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য প্রভাব খাটিয়ে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাটটি নিয়েছেন টিউলিপ। দুদকের মামলার নথি অনুযায়ী, এই ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্য ছিল প্রায় ৪৫ লাখ টাকা, যার মধ্যে কেবল ২ লাখ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। পরে সেটি নিজের ছোট বোনের নামে দলিল করে দেন, যা তদন্তকারীদের মতে একটি ভুয়া নোটারি।
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ও আয়কর কেলেঙ্কারি প্রকাশ
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের এনআইডি, পাসপোর্ট, টিআইএন নম্বর এবং আয়কর বিবরণীর মাধ্যমে এদেশের একজন বৈধ নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হলেও, তিনি বারবার নিজের বাংলাদেশি পরিচয় অস্বীকার করে এসেছেন। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ২০০১ সালে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ইস্যু করা হয়।
দুদক জানিয়েছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে তিনটির অভিযোগপত্র ইতিমধ্যে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে অন্যতম অভিযোগ হচ্ছে পূর্বাচল প্রকল্পে শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের প্লট বরাদ্দ করে দেওয়ার চেষ্টা।
টিউলিপের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিফলন
টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এগুলোকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি’ বলে দাবি করেছেন। তার মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, তাকে যথাযথভাবে এসব বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি এবং কোনো আইনসিদ্ধ প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
ব্রিটেনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং তার ব্রিটিশ সরকারে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, ” যদি এসব নথি সত্য হয়, তাহলে এটি স্পষ্ট যে টিউলিপ বাংলাদেশি নাগরিক এবং তিনি আইনি বাধ্যবাধকতা এড়াতে অসত্য বলছেন।”
পরিকল্পনায় হাসিনার রি-এন্ট্রি? রাজনৈতিক মঞ্চে আবারও উত্তাপ নেপথ্যে ‘র’