বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

এশার নামাজের নিয়ম, রাকআত ও ফজিলত সংক্রান্ত সহিহ হাদিস

বহুল পঠিত

এশার নামাজ ইসলামের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের শেষ নামাজ। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক মহান সুযোগ। দিনের ব্যস্ততা শেষে যখন চারদিক শান্ত, তখন এশার নামাজের মাধ্যমে মানুষ নিজের মন ও আত্মাকে প্রশান্ত করতে পারে। আজকের লেখায় সহিহ ভাবে এশার নামাজের নিয়ম সহ সবকিছু সংক্ষেপে জানাবো। (ইংশা-আল্লাহ)

এশার নামাজের ওয়াক্ত

আজানের সময়

সূর্যের অবস্থান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী এশার আজানের সময় নির্ধারিত হয়।

ওয়াক্ত শুরু

এই নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় মাগরিব নামাজের পর, যখন আকাশের লালাভ আভা মিলিয়ে যায়। এছাড়াও, আকাশে রাতের অন্ধকার প্রায় পুরোপুরি নেমে আসে।

সূর্যের অবস্থান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাহায্যে সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে স্থানভেদে সময় কিছুটা তারতম্য ঘটতে পারে।

এশার নামাজ পড়ার শেষ সময়

এই নামাজের ওয়াক্ত মুলত মাগরিবের পর থেকে রাতের মধ্যভাগ পর্যন্ত। যদি কেউ কোন বিশেষ কারণে এই সময়ের মধ্যে নামাজ পড়তে না পারে, তবে ফজরের আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া বৈধ।

সরলভাবে বলতে গেলে, এই নামাজ ফজরের ঠিক আগ পর্যন্ত পড়া যায়

এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা

এই নামাজের মোট রাকআত সংখ্যা বিভিন্নভাবে গণনা করা হয়, তবে সর্বনিম্ন মোট ৭ রাকাত (ফরজ ৪+সুন্নাত ২+বিতর ১) পড়া যায়। এছাড়া অনেকে ৯ রাকাত, ১১ রাকাত বা ১৫ রাকাত পরে থাকেন। বাংলাদেশে সাধারণভাবে ১৭ রাকআত প্রচলিত।
নিচে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:

  • ৪ রাকআত সুন্নতে গায়র মোয়াক্কাদা
  • ৪ রাকআত ফরজ
  • ২ রাকআত সুন্নতে মোয়াক্কাদা
  • ২ রাকআত নফল
  • ৩ রাকআত বিতর ওয়াজিব ( বিতর নামাজ ১/৩/৫/৭… বিজোর রাকাত পড়া হয়)
  • ২ রাকআত নফল (ইচ্ছা করলে পড়া যায়) (বসে পড়া) (মুসনাদ, আহমাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১২৮৪নং)

নিয়ত

ইসলামে প্রতিটি আমলের মূল ভিত্তি হলো নিয়ত। নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই সকল কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১) । অর্থাৎ আমলের মূল্য নির্ধারিত হয় নিয়তের দ্বারা।

নামাজের নিয়ত:
নামাজের নিয়ত মানে হলো নির্দিষ্ট নামাজের জন্য মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করা। এটি মুখে উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক নয়, বরং মনে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সেই নামাজের ধরন, রাকাত সংখ্যা ও প্রকার (ফরজ, সুন্নত বা নফল) স্থির করা যথেষ্ট। নিয়তের মাধ্যমে নামাজের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয় এবং ইবাদত পূর্ণতা লাভ করে।

এশার ফরজ নামাজের নিয়ত

“আমি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কেবলার দিকে দাড়িয়ে এশার ৪ রাকআত ফরজ নামাজের জন্য প্রস্তুত হলাম নামাজ শুরু করলাম” ( এভাবে মনে মনে স্থির করতে পারেন)

নামাজ শুরুর আগে তাকবীরে তাহরিমা “আল্লাহু আকবার” উচ্চারণ করুন।

এশার সুন্নত নামাজের নিয়ত

“আমি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কেবলার দিকে দাড়িয়ে এশার ৪/২( যত রাকাত পড়বেন) রাকআত সুন্নাত নামাজের জন্য প্রস্তুত হলাম নামাজ শুরু করলাম”

নামাজ শুরুর আগে তাকবীরে তাহরিমা “আল্লাহু আকবার” উচ্চারণ করুন।

বিতর নামাজের নিয়ত

“আমি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কেবলার দিকে দাড়িয়ে এশার ৪/২( যত রাকাত পড়বেন) রাকআত সুন্নাত নামাজের জন্য প্রস্তুত হলাম নামাজ শুরু করলাম”

নামাজ শুরুর আগে তাকবীরে তাহরিমা “আল্লাহু আকবার” উচ্চারণ করুন।

দুই রাকাত নফল নামাজের নিয়ত

“আমি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কেবলার দিকে দাড়িয়ে ২ রাকআত নফল নামাজের জন্য প্রস্তুত হলাম নামাজ শুরু করলাম”

নামাজ শুরুর আগে তাকবীরে তাহরিমা “আল্লাহু আকবার” উচ্চারণ করুন।

এশার নামাজের নিয়ম

এশার ফরজ নামাজের নিয়ম

১। অজু করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ান
২। নিয়ত করে তাকবির “আল্লাহু আকবার” বলুন। (একাকী নামাজেও একামত দেয়া সুন্নত)
৩। সূরা ফাতিহা পড়ুন এরপর অন্য সূরা পড়ুন বা সুরার কিছু অংশ নিয়ম অনুযায়ী তেলাওয়াত করুন। ৪। রুকু ও সিজদা সম্পন্ন করুন।
৫। এইভাবে চার রাকআত পড়ুন। (তৃতীয় চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা তেলাওয়াত না করলেও হবে। প্রথম দুই রাকআত জোড়ে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া যায়, বাকি দুই রাকআত নিচু স্বরে। ৬। শেষ রাকাতের বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে হবে। এরপর সালাম ফেরাতে হবে। 

এশার সুন্নত নামাজের নিয়ম

৪ রাকআত সুন্নাত নামাজের নিয়ম

ফরজের আগে বা পরে ৪ রাকআত সুন্নত নামাজ পড়া যায়। এই চার রাকআত সুন্নাত ফরজের মত করে পড়তে পারেন তবে নামাজের পূর্বে একামত দেয়ার প্রয়োজন নাই। প্রতি রাকাতে কিরাত তাকবির সবকিছু ধিরে বা নিঃশব্দে পরবেন।

২ রাকআত সুন্নাত নামাজের নিয়ম

ফরজের পরে দুই রাকআত সুন্নত নামাজ পড়া সুন্নতে মোয়াক্কাদা।

১। নিয়ত করে তাকবির “আল্লাহু আকবার” বলুন।
২। সূরা ফাতিহা পড়ুন এরপর অন্য সূরা পড়ুন বা সুরার কিছু অংশ নিয়ম অনুশারে তেলাওয়াত করুন। ৩। রুকু ও সিজদা সম্পন্ন করুন। এভাবে দ্বিতীয় রাকআতও সম্পন্ন করুন। ৪। এরপর বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়ায়ে মাসুরা পরে সালাম ফিরান।

২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম

নফল নামাজ ইচ্ছা অনুযায়ী পড়া যায়, এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি পায়।

১। নিয়ত করে তাকবির “আল্লাহু আকবার” বলুন।
২। সূরা ফাতিহা পড়ুন এরপর অন্য সূরা পড়ুন বা সুরার কিছু অংশ নিয়ম অনুশারে তেলাওয়াত করুন। ৩। রুকু ও সিজদা সম্পন্ন করুন। এভাবে দ্বিতীয় রাকআতও সম্পন্ন করুন। ৪। এরপর বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়ায়ে মাসুরা পরে সালাম ফিরান।

বিতর নামাজের নিয়ম

বিতরের সালাত আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। তন্মধ্যে তিন রাকআত বিতর তিনভাবে পড়ার প্রচলন রয়েছে।

প্রথম পদ্ধতি: অন্যান্য সালাতের মতো প্রথমে দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেবেন। এরপর পৃথকভাবে আরেক রাকআত পড়ে রুকুর আগে বা পরে দুআ কুনুত পড়ে সিজদা শেষে আবার বসে সালাম ফিরাবেন। (মুসলিম: ১২৫২)

দিতীয় পদ্ধতি:

১। নিয়ত করা: মনে মনে বিতর নামাজের নিয়ত করতে হবে। ২। তাকবির: কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করতে হবে। ৩। প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাত: স্বাভাবিকভাবে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে। দ্বিতীয় রাকাতের পর তাশাহুদ বৈঠকে না বসে সরাসরি ১ম রাকাতের মত উঠে দাড়াতে হবে ৪। সূরা ও দোয়া কুনুত: তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য কোনো সূরা পড়তে হবে। এরপর রুকু করে উঠে দাড়ানোর পর দুই হাত তুলে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হবে। রুকুর আগে বা পরে দোয়া কুনুত পড়া যায়। ৫। নামাজ শেষ করা: দোয়া কুনুত পড়ার পর স্বাভাবিকভাবে রুকু, সিজদা এবং শেষে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে। 

তৃতীয় পদ্ধতি: এ পদ্ধতিটি আমাদের দেশে প্রচলিত। এ পদ্ধতিতে ২য় রাকআত শেষে বসে তাশাহহুদ পড়া হয়। এরপর তৃতীয় রাকআতে উঠে রুকুর আগে কিনবা পড়ে দোয়াকুনুত পড়া হয়।

এশার নামাজের পর আমল

এশার ফরজ নামাজের পর দোয়া

রাসুল্লাল্লাহ (সা:) নামাজের পর অনেক দোয়া পড়তেন হাদিসের আলোকে সংক্ষিপ্ত কিছু দোয়া দেয়া হল-

১। আল্লাহু আকবার (উচ্চস্বরে ১ বার)

২। أَسْتَغْفِرُ الله আস্তাগফিরুল্লাহ্‌, (৩ বার।)

৩। اَللّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ (১ বার)

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু অমিন্‌কাস সালা-মু তাবা-রাকতা ইয়া যাল জালা-লি অল ইকরা-ম।

অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি শান্তি (সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র) এবং তোমার নিকট থেকেই শান্তি। তুমি বরকতময় হে মহিমময়, মহানুভব! (মুসলিম ১/৪১৪)

৪। لاَ إِلهَ إِلاَّ الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণ:- “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহ্‌দাহু লা শারীকা লাহ্‌, লাহুল মুলকু অলাহুলহামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

অর্থ:- আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই, সমস্ত রাজত্ব তাঁরই জন্য , সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

৫। اَللّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الَجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’তিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউযাল জাদ্দি মিনকাল জাউঊ। (১ বার)

অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর তা রোধ করার এবং যা রোধ কর তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের ধন তোমার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না। (বুখারী, মুসলিম,মিশকাত ৯৬২ নং)

৬। সুবহা-নাল্লাহ্ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লা-হ্‌ ৩৩ বার, আল্লা-হু আকবার ৩৩ বার।

আর ১০০ পূরণ করার জন্য উপরোক্ত ৪নং দুআ একবার পঠনীয়। এগুলি পাঠ করলে সমুদ্ররের ফেনা পরিমান গুনাহ তা আল্লাহ্‌ তায়ালা মাফ করে দেন। (মুসলিম, সহীহ ১/৪১৮, আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৭১) ‘আল্লাহু আকবার’ ৩৪ বারও পড়া যায়। (মুসলিম, সহীহ ১৩৭৭নং)

৭। সুরা ইখলাস,ফালাক্ব ও নাস ১ বার করে। (আবু দাঊদ২/৮৬, সহীহ তিরমিযী ১/৮, নাসাঈ ৩/৬৮)

৮. আয়াতুল কুরসী ১বার। রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।  

এশার নামাজের পর তাসবিহ

নামাজ শেষে নিয়মিত তাসবিহ ও জিকির করলে মন শান্ত হয়, আত্মা পবিত্র হয় এবং আল্লাহর রহমত লাভ হয়।

এশার নামাজের গুরুত্ব

এই নামাজের ফজিলত অপরিসীম। রাতের নিস্তব্ধতায় এটি মানুষকে আল্লাহর স্মরণে যুক্ত করে। এটি আধ্যাত্মিক শান্তি ও আত্মশুদ্ধির পথ উন্মুক্ত করে।

এশার নামাজের ফজিলত

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ফজর ও এশার নামায আদায় করা মুনাফিকদের জন্য কষ্টকর। যদি তোমরা এই দুই ওয়াক্তের নামাযের ফযীলাত সম্পর্কে অবহিত থাকতে, তবে অবশ্যই তোমরা এই দুই সময়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও জামাআতে হাযির হতে এবং জামাআতের প্রথম লাইনটি ফেরেশতাদের কাতারের অনুরূপ।

রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে এশার সালাত আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত্রি নফল ছালাত আদায় করল।” ইমাম মালেক ১/১৩২, মুসলিম ৬৫৬, আবু দাউদ ৫৫৫ ও তিরমিযি ২২১।
এটি বোঝায়, এই নামাজের সওয়াব অত্যন্ত বেশি।

এশার নামাজের পর সুরা মুলক পড়ার ফজিলত

জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা তানূয়ীলুস সাজদা ও তাবারাকা (আল-মুলক) না পাঠ করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। সহীহঃ মিশকাত (হাঃ ২১৫৫), সহীহ হাদীস সিরিজ (হাঃ ৫৮৫)। যেহেতু তিনি (সাঃ) ঘুমানোর পূর্বে সুরাটি পরতেন এতেই বোঝা যায় এ সুরার ফজিলত অনেক বেশি।

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সূরাটি হল তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক। (জামে তিরমিযী ২৮৯১; সুনানে আবু দাউদ ১৪০০; সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৭৮৬; মুসনাদে আহমাদ ৭৯৭৫)

এশার নামাজের হাদিস

১। আবূ বারযা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাযের আগে ঘুমানো এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। (বুখারী ৫৬৮, ৭৭১, মুসলিম ১৪৯৪-১৪৯৫)

২। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, ‘‘আমি উম্মতের জন্য কষ্টকর না জানলে এশার নামাযকে দেরী করে পড়তে এবং প্রত্যেক নামাযের সময় দাঁতন করতে আদেশ দিতাম।’’ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৩৭৬

৩। তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর না জানলে (প্রত্যেক) ওযুর সাথে দাঁতন করা ফরয করতাম এবং এশার নামায অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরী করে পড়তাম।’’ (হাকেম, বাইহাক্বী, সহীহুল জা’মে হা/৫৩১৯)

এশার নামাজে সাধারণ ভুল

  • নাম্মাজে মনোযোগ হারানো।
  • নামাজ শেষে জিকির, তাসবিহ এবং না করা।
  • ফরজ পড়ে সরাসরি উঠে যাওয়া।

এসব ভুল এড়িয়ে চলা উচিত যাতে নামাজ পূর্ণ সওয়াবযুক্ত হয়।

এশার নামাজ শুধু দিনের শেষ ইবাদত নয়, এটি আত্মাকে প্রশান্ত ও ঈমানকে দৃঢ় করার এক বিশেষ মাধ্যম। নিয়ম অনুযায়ী নামাজ পড়লে আল্লাহর রহমত ও শান্তি লাভ করা যায়।

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার উপায়

  • কিছুক্ষণ মন শান্ত রাখুন।
  • দুনিয়ার চিন্তা বাদ দিন।
  • অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন।
  • কিছু সময় জিকির ও দোয়ায় কাটান।

এশার নামাজ সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১। এশার নামাজ কয়টায়? বা এশার নামাজ কয়টায় শুরু হয়? বা এশার নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় কখন?

সূর্যাস্তের পর আকাশের লাল আভা মিলিয়ে গেলে এশার নামাজের সময় শুরু হয়। নু’মান বিন বাশীর (রাঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী (চাঁদের মাসের) তৃতীয় রাতে চাঁদ ডুবে গেলে এশার সময় হয়। (আবূদাঊদ, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৬১৩নং)

২। এশার নামাজ ৯ রাকাত কি কি?

৪ ফরজ + ২ সুন্নত + ৩ বিতর = ৯ রাকআত।

৩। এশার নামাজ ১৫ রাকাত কি কি?

(৪ সুন্নতে গায়র মোয়াক্কাদা + ৪ ফরজ +২ সুন্নত + ২ নফল + ৩ বিতর) = ১৫ রাকআত

৪। এশার নামাজের ফরজ আগে না সুন্নত আগে

সাধারণত ফরজের আগে ৪ রাকআত সুন্নত এবং পরে ২ রাকআত সুন্নত পড়া হয়।

৫। এশার সুন্নত নামাজের ফজিলত কি?

আল্লাহর রাসূল বলেন, “যে কোন মুসলিম বান্দা প্রত্যহ্‌ আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে বারো রাকআত নফল (ফরয ব্যতীত সুন্নত) নামায পড়লেই আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার জন্য এক গৃহ্‌ নির্মাণ করেন। অথবা তার জন্য জান্নাতে এক ঘর নির্মাণ করা হয়।” (মুসলিম, সহীহ ৭২৮নং, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, তিরমিযী, সুনান)

এই ১২ রাকাতের মধ্যে এশার ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নাত রয়েছে।

৬। এশার সুন্নত না পড়লে কি গুনাহ হবে?

না, গুনাহ হবে না, তবে বড় সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া যাবে।

৭। এশা নামের অর্থ?

‘এশা’ অর্থ হলো রাত বা গভীর অন্ধকারের সময়; ইসলামিক অর্থে এটি রাতের নামাজের নাম।

৮। এশার নামাজের পর তাহাজ্জুদ পড়া যাবে কি?

হ্যাঁ, এশার নামাজের পর বিশ্রাম নিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।

৯। এশার নামাজের পর কি নফল নামাজ পড়া যায়?

হ্যাঁ, ইচ্ছা করলে ২ রাকআত নফল নামাজ পড়া যায়।

১০। এশার নামাজের পর কোন সূরা পড়তে হয়

সুরা মুলক, সুরা ইখলাস, সুরা নাস ও সুরা ফালাক পড়া উত্তম।

১১। চলন্ত বাস বা যাত্রী অবস্থায় ইশার নামাজ আদায় করা যাবে কি?

হ্যাঁ যাবে।


আরো পড়ুন

ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম – সুন্দর অর্থসহ সেরা নামের তালিকা

বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম পরিবারগুলোতে সন্তানের জন্য সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখার আগ্রহ সর্বদা ছিল এবং থাকবে। বিশেষ করে ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম খোঁজার ক্ষেত্রে অভিভাবকরা বেশ সচেতন থাকেন, কারণ নাম শুধু পরিচয়ের নয়—এটি চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের একটি ইতিবাচক প্রতিফলন।

সূরা ফীল বাংলা উচ্চারণ, আরবি, অর্থ, তাফসীর ও ফজিলত – সম্পূর্ণ গাইড

ইসলামের ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা আছে, যা মানুষের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। সূরা ফীল ঠিক সেই ধরনের একটি সূরা। মাত্র পাঁচ আয়াতের হলেও এতে আছে আল্লাহর কুদরতের জীবন্ত প্রমাণ, অহংকারের কঠিন পরিণতি এবং দুর্বলের প্রতি আল্লাহর বিশেষ সুরক্ষা।

সূরা কদরের বাংলা অর্থ ও উচ্চারণ: লাইলাতুল কদরের মহিমা, আমল ও ফজিলত

পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরা গুলোর মধ্যে সুরা কদর একটি। এই সূরা মূলত লাইলাতুল কদরের রাতের মহিমা এবং কুরআন নাজিল হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে। এই লেখায় সূরা কদরের বাংলা অর্থ ও উচ্চারণ, ফযিলত সহ সবকিছু জানব।
- Advertisement -spot_img

আরও প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ প্রবন্ধ