বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

মাসিক অনিয়মিত? জেনে নিন এর পিছনের মূল ১০টি কারণ ও প্রতিকার

বহুল পঠিত

প্রত্যেক নারীর জীবনে মাসিক বা ঋতুচক্র একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যখন এই চক্র অনিয়মিত হয়ে যায়, তখন তা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। চলুন জেনে নেই মাসিক অনিয়মিত হওয়ার কারণ ও সমাধান ।

অনেকেই ভাবেন এটি বড় কোনো সমস্যা নয়। তবে বাস্তবতা হলো, অনিয়মিত মাসিক আপনার শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিতে পারে।

এই লেখায় আপনি জানতে পারবেন:

  • কোন মাসিককে অনিয়মিত বলা হয়
  • এর পেছনের প্রধান কারণসমূহ
  • এবং সহজ কিছু করণীয়

কোন মাসিককে অনিয়মিত বলা হয়?

সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের ব্যবধানে মাসিক হওয়া স্বাভাবিক। তবে নিচের যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে সেটিকে অনিয়মিত মাসিক ধরা হয়:

  • মাসিক ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি ব্যবধানে হয়
  • প্রতি মাসে তারিখের মধ্যে ৭ দিনের বেশি পার্থক্য থাকে
  • মাসিক একেবারে ২–৩ মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকে

মাসিক অনিয়মিত হওয়ার প্রধান কারণসমূহ

মাসিক অনিয়মিত হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। মূলত এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  • জীবনযাত্রাজনিত কারণ
  • চিকিৎসাগত কারণ

১. জীবনযাত্রাজনিত কারণ (Lifestyle Factors)

মানসিক চাপ

মানসিক চাপের কারণে মানব শরীরে অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। যার ফলে মাসিক সময়মতো হয় না।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অতিরিক্ত চিনি ও জাঙ্ক ফুড খাওয়া ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয়। এতে হরমোনে গোলযোগ দেখা যায়।

অতিরিক্ত ব্যায়াম

খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম হরমোনের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত করে। বিশেষ করে ক্রীড়াবিদদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

ঘুমের অভাব

নিয়মিত ঘুম না হলে শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী সিস্টেমের কার্যকারিতা কমে যায়। ফলে মাসিক চক্রে অনিয়ম দেখা যায়।

২. চিকিৎসাগত কারণ (Medical Conditions)

পিসিওএস (PCOS)

এটি ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি করে। পাশাপাশি পুরুষ হরমোন বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ডিম্বস্ফোটন ব্যাহত হয় এবং মাসিক অনিয়মিত হয়।

থাইরয়েড সমস্যা

থাইরয়েড হরমোন শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। যদি এটি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে মাসিক চক্রের ওপর প্রভাব পড়ে।

জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা পলিপ

জরায়ুর দেয়ালে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (ফাইব্রয়েড) বা ছোট গঠন (পলিপ) মাসিকের পরিমাণ ও সময়ে পরিবর্তন আনতে পারে।

পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID)

জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের সংক্রমণ মাসিক অনিয়ম ও ব্যথার কারণ হতে পারে।

৩. অন্যান্য কারণ

বয়ঃসন্ধি ও পেরিমেনোপজ

এই সময়ে হরমোনের ওঠানামার কারণে মাসিক চক্র অনিয়মিত হতে পারে।

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, কেমোথেরাপি বা হরমোন-ভিত্তিক ওষুধ মাসিকের স্বাভাবিকতা নষ্ট করতে পারে।

অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত ওজন

অতিরিক্ত চর্বি এস্ট্রোজেন বাড়ায়। অপর্যাপ্ত ওজন আবার হরমোন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। দুটোই মাসিক অনিয়মের কারণ।

মাসিক অনিয়মিত হলে করণীয় কী?

১. মাসিক ট্র্যাক করুন

মাসিক শুরু ও শেষের তারিখ, রক্তপাতের মাত্রা ও লক্ষণ নোট করে রাখুন।

২. জীবনযাত্রা ঠিক করুন

  • মানসিক চাপ কমান
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়াম করুন

৩. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি সমস্যাটি দীর্ঘদিন থাকে বা অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা যায়, তবে অবশ্যই গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

অনিয়মিত মাসিক একটি উপসর্গ মাত্র। এর পেছনে ছোট থেকে বড় অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই এটি অবহেলা করা উচিত নয়।

আরো পড়ুন

ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়: ক্যান্সার ঝুঁকি কমানোর কার্যকরী পদ্ধতি

সুস্থ খাদ্যাভ্যাস: ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ সুষম খাদ্য গ্রহণ ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকরী উপায়। প্রতিদিন ফলমূল, শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। লাল মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসের পরিমাণ সীমিত...

সুস্থতার চাবিকাঠি: নারীর প্রতিদিনের স্মার্ট ডায়েট প্ল্যান

ভূমিকা: ওজন নয়, সুস্থতাই মূল মন্ত্র  আধুনিক জীবনে নারীরা ওজন কমানোর পেছনে ছুটে। কিন্তু প্রকৃত সুখ নিহিত আছে সুস্থতায়। একটি স্মার্ট ডায়েট প্ল্যান আপনাকে দেবে...
- Advertisement -spot_img

আরও প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ প্রবন্ধ