জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ছায়ায়, নিউইয়র্কের এক হোটেলের ভেন্যুতে আলো ঝলমলে এক সন্ধ্যায়, সম্মানিত হলেন একজন বাঙালি যিনি দারিদ্র্যের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছেন।অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ও মাইক্রোক্রেডিট বিপ্লবের স্থপতি, এবার পেলেন গ্লোবাল এডুকেশন সম্মাননা থেয়ারওয়ার্ল্ড-এর ‘Unlock Big Change Award’।
এই পুরস্কার শুধু একজন ব্যক্তির কৃতিত্ব নয়, বরং শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়ের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
‘ঋণও এক মানবাধিকার’
পুরস্কার গ্রহণ করে ইউনূস বলেন, “খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো ঋণও একটি মৌলিক মানবাধিকার।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, পৃথিবীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূলধারায় না আনলে প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়।
“যদি আর্থিক ব্যবস্থার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত হয়, তাহলে পৃথিবীতে আর কেউ গরিব থাকবে না,” বলেন ইউনূস।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মাইক্রোক্রেডিট মডেল শুধুই ঋণ দেওয়া নয় এটি ছিল শিক্ষার সঙ্গী। কারণ, নারীদের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো সহজ হয়েছে।
শিক্ষা: কেবল ডিগ্রির জন্য নয়
এই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস শিক্ষাব্যবস্থার দিকেও প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।
তাঁর মতে, বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা শিশুদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রস্তুত করছে না।
“শিশুদের শেখানো উচিত কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়,” বলেন তিনি।
তাঁর দৃষ্টিতে, বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত এমন এক জায়গা, যেখানে সমাজের জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজার কাজটি শুধু উৎসাহিত নয়, প্রত্যাশিত হবে।
“সব সামাজিক সমস্যারই ব্যবসায়িক সমাধান সম্ভব,” বলেন ইউনূস।
একটি পুরস্কার, একটি বার্তা
অনুষ্ঠানে ইউনূসের পাশাপাশি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডিকেও সম্মান জানানো হয়।
তবে মূল আলোকচ্ছটা ছিল অধ্যাপক ইউনূসের দিকেই তাঁর দারিদ্র্য বিমোচন মডেল এবং শিক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা দীর্ঘ আন্দোলনের কারণেই।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন এবং থেয়ারওয়ার্ল্ড চেয়ার সারা ব্রাউন।
গর্ডন ব্রাউন বলেন, “গত পাঁচ দশকে, বিশ্বের দারিদ্র্য নিরসনে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে প্রভাবশালী উদ্যোগ ছিল গ্রামীণ ব্যাংক। অধ্যাপক ইউনূস আজও আমাদের অনুপ্রেরণা।”
থেয়ারওয়ার্ল্ড: ভবিষ্যতের শিক্ষায় বিনিয়োগ
থেয়ারওয়ার্ল্ড, একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা, বিশ্বজুড়ে শিশুদের মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।তাদের মতে, শিক্ষা হলো একমাত্র হাতিয়ার যা বিশ্বব্যাপী অসমতা, দারিদ্র্য ও সুযোগহীনতার বিরুদ্ধে লড়তে পারে।এই পুরস্কারের মাধ্যমে তারা এমন ব্যক্তিদের সম্মান জানায়, যাঁরা সেই রূপান্তরের সামনে দাঁড়িয়ে পথ দেখাচ্ছেন।
অধ্যাপক ইউনূসের এই স্বীকৃতি শুধু তাঁর অতীত অবদানের স্বীকৃতি নয় এটি ভবিষ্যতের প্রতি এক বার্তাও।
একটি পৃথিবী, যেখানে ক্ষুদ্র ঋণ শুধু জীবিকা নয়, শিক্ষা ও সম্ভাবনার দরজাও খুলে দেয়।
সুত্রঃ বাসস