যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটি ২০২৫ সালের নির্বাচনে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো।
৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি শহরটির প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোটের ফলাফল
ডেমোক্র্যাট পার্টি সমর্থিত মামদানি পেয়েছেন ১০ লক্ষ ১৮ হাজার ১৯০ ভোট (৫০.৩%)।
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো পেয়েছেন ৮ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৭৬ ভোট (৪১.৬%)।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া পেয়েছেন ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫৫৪ ভোট (৭.১%)।
ভোটারদের অংশগ্রহণ
এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল রেকর্ড পরিমাণ।
১৯৮৯ সালের পর প্রথমবারের মতো ২০ লক্ষেরও বেশি ভোটার ভোট দেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ফলাফল নিউইয়র্কের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করছে।
কেন জিতলেন মামদানি
অনেকে মনে করেন, মামদানির জয় কেবল ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়ের ফল নয়।
বরং, বাস্তব জীবনের ব্যয়, আবাসন সংকট ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে তাঁর দৃঢ় অবস্থান ভোটারদের মন জয় করেছে।
তাই এই জয় জনগণের আশার প্রতিফলন।
ভোটারদের সমর্থনের বৈচিত্র্য
এনবিসি নিউজের এক্সিট পোল অনুযায়ী, মামদানি প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীর ভোট পেয়েছেন শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো, এশীয় ও অভিবাসী জনগোষ্ঠীর বড় অংশ তাঁর পক্ষে ভোট দেন।
বিশেষ করে ৪৫ বছরের নিচের ভোটারদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক।
কুওমোর তুলনায় তিনি এই গোষ্ঠীতে ৪৩ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র; বিতর্ক ও অবস্থান
তবে, মামদানির ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান নির্বাচনের পুরো সময় আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
যদিও তাঁর মুসলিম পরিচয় ও মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত ভোটাররা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ইহুদি ভোটারদের মধ্যে কুওমো কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, অন্যান্য গোষ্ঠীর সমর্থন মামদানির পক্ষে ভারসাম্য তৈরি করেছে।
নতুন দিকনির্দেশনা
এই জয় শুধু একজন রাজনীতিকের ব্যক্তিগত অর্জন নয়।
বরং, এটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনীতির নতুন দিকনির্দেশনা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
সাবেক গভর্নর কুওমোকে অনেকেই পুরোনো রাজনীতির প্রতীক হিসেবে দেখলেও, মামদানি “গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী” পরিচয়ে নতুন প্রজন্মের আশা জাগিয়েছেন।
অবশেষে বলা যায়, জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয় প্রমাণ করেছে তিনিই নিউইয়র্ক শহর পরিবর্তনের পথে।
ধর্ম, জাতি বা বংশপরিচয় নয়; মানুষের বাস্তব সমস্যা ও আশাই এই জয়ের ভিত্তি।
সূত্র : আলজাজিরা, এনবিসি নিউজ




