সূরা মূলকের পরিচিতি
এটি পবিত্র কুরআনুল কারিমের ৬৭তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর অর্থ হলো ‘সার্বভৌমত্ব’। এই সূরাটি পাঠকারীর জন্য কবরের আজাব থেকে মুক্তি ও কিয়ামতের দিন সুপারিশ করার মতো অনেক ফজিলতপূর্ণ। চলুন সূরা মুলকের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ সবকিছু জেনে নেই।
- নাম: আল-মুলক (অর্থ: সার্বভৌমত্ব বা কর্তৃত্ব বা রাজত্ব)
- নাজিল হওয়ার স্থান: মক্কা
- আয়াত সংখ্যা: ৩০
- রুকু সংখ্যা: ২
সূরা মূলক শানে নুজুল
সূরা আল-মুলকের অবতীর্ণ হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো শানে নুযূল (অবতীর্ণ হওয়ার বিশেষ প্রেক্ষাপট) বর্ণিত হয়নি। তবে সাধারণভাবে এটি একটি মাক্কী সূরা হিসেবে স্বীকৃত, অর্থাৎ ইসলামের প্রাথমিক সময়ে মক্কায় যখন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ও সাহাবাকেরামরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন, তখন এই সুরাটি নাজিল হয়। সূরাটির মূল বার্তা হলো আল্লাহ তাআলার পূর্ণ ক্ষমতা, রাজত্ব ও সৃষ্টির উপর তাঁর সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা। এটি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জীবন ও মৃত্যু উভয়ই আল্লাহর সৃষ্টি, এবং তিনি পরীক্ষা করেন কে সৎকর্মে শ্রেষ্ঠ।
সুরা মূলক আরবি উচ্চারণ
এই অংশে সুরাটি আরবি ভাষায় সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যাতে পাঠকরা মূল ভাষায়ও তা পাঠ করতে পারেন। কুরআনের ভাষা আরবি, তাই উচ্চারণ ও পাঠের সময় মনোযোগ ও শ্রদ্ধা বজায় রাখা উচিত।
সুরা মূলকের প্রথম দশ আয়াত
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
- ﴾تَبٰرَكَ الَّذِیۡ بِیَدِهِ الۡمُلۡكُ ۫ وَ هُوَ عَلٰی كُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرُۨ ۙ﴿۱
- الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَكُمۡ اَیُّكُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ﴿۲
- الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ طِبَاقًا ؕ مَا تَرٰی فِیۡ خَلۡقِ الرَّحۡمٰنِ مِنۡ تَفٰوُتٍ ؕ فَارۡجِعِ الۡبَصَرَ ۙ هَلۡ تَرٰی مِنۡ فُطُوۡرٍ ﴿۳
- ۴﴿ ثُمَّ ارۡجِعِ الۡبَصَرَ كَرَّتَیۡنِ یَنۡقَلِبۡ اِلَیۡكَ الۡبَصَرُ خَاسِئًا وَّ هُوَ حَسِیۡرٌ
- وَ لَقَدۡ زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنۡیَا بِمَصَابِیۡحَ وَ جَعَلۡنٰهَا رُجُوۡمًا لِّلشَّیٰطِیۡنِ وَ اَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابَ السَّعِیۡرِ ﴿۵
- وَ لِلَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا بِرَبِّهِمۡ عَذَابُ جَهَنَّمَ ؕ وَ بِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ ﴿۶
- تَكَادُ تَمَیَّزُ مِنَ الۡغَیۡظِ ؕ كُلَّمَاۤ اُلۡقِیَ فِیۡهَا فَوۡجٌ سَاَلَهُمۡ خَزَنَتُهَاۤ اَلَمۡ یَاۡتِكُمۡ نَذِیۡرٌ ﴿۸
- قَالُوۡا بَلٰی قَدۡ جَآءَنَا نَذِیۡرٌ ۬ۙ فَكَذَّبۡنَا وَ قُلۡنَا مَا نَزَّلَ اللّٰهُ مِنۡ شَیۡءٍ ۚۖ اِنۡ اَنۡتُمۡ اِلَّا فِیۡ ضَلٰلٍ كَبِیۡرٍ ﴿۹
- وَ قَالُوۡا لَوۡ كُنَّا نَسۡمَعُ اَوۡ نَعۡقِلُ مَا كُنَّا فِیۡۤ اَصۡحٰبِ السَّعِیۡرِ ﴿۱۰
মধ্যবর্তী ১০ আয়াত
- فَاعۡتَرَفُوۡا بِذَنۡۢبِهِمۡ ۚ فَسُحۡقًا لِّاَصۡحٰبِ السَّعِیۡرِ ﴿۱۱
- اِنَّ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ بِالۡغَیۡبِ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ اَجۡرٌ كَبِیۡرٌ ﴿۱۲
- وَ اَسِرُّوۡا قَوۡلَكُمۡ اَوِ اجۡهَرُوۡا بِهٖ ؕ اِنَّهٗ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ ﴿۱۳
- اَلَا یَعۡلَمُ مَنۡ خَلَقَ ؕ وَ هُوَ اللَّطِیۡفُ الۡخَبِیۡرُ ﴿۱۴
- هُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَكُمُ الۡاَرۡضَ ذَلُوۡلًا فَامۡشُوۡا فِیۡ مَنَاكِبِهَا وَ كُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِهٖ ؕ وَ اِلَیۡهِ النُّشُوۡرُ ﴿۱۵
- ءَاَمِنۡتُمۡ مَّنۡ فِی السَّمَآءِ اَنۡ یَّخۡسِفَ بِكُمُ الۡاَرۡضَ فَاِذَا هِیَ تَمُوۡرُ ﴿ۙ۱۶
- اَمۡ اَمِنۡتُمۡ مَّنۡ فِی السَّمَآءِ اَنۡ یُّرۡسِلَ عَلَیۡكُمۡ حَاصِبًا ؕ فَسَتَعۡلَمُوۡنَ كَیۡفَ نَذِیۡرِ ﴿۱۷
- وَ لَقَدۡ كَذَّبَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ فَكَیۡفَ كَانَ نَكِیۡرِ ﴿۱۸
- اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اِلَی الطَّیۡرِ فَوۡقَهُمۡ صٰٓفّٰتٍ وَّ یَقۡبِضۡنَ ؔۘؕ مَا یُمۡسِكُهُنَّ اِلَّا الرَّحۡمٰنُ ؕ اِنَّهٗ بِكُلِّ شَیۡءٍۭ بَصِیۡرٌ ﴿۱۹
- اَمَّنۡ هٰذَا الَّذِیۡ هُوَ جُنۡدٌ لَّكُمۡ یَنۡصُرُكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ الرَّحۡمٰنِ ؕ اِنِ الۡكٰفِرُوۡنَ اِلَّا فِیۡ غُرُوۡرٍ ﴿ۚ۲۰
শেষের ১০ আয়াত
- اَمَّنۡ هٰذَا الَّذِیۡ یَرۡزُقُكُمۡ اِنۡ اَمۡسَكَ رِزۡقَهٗ ۚ بَلۡ لَّجُّوۡا فِیۡ عُتُوٍّ وَّ نُفُوۡرٍ ﴿۲۱
- اَفَمَنۡ یَّمۡشِیۡ مُكِبًّا عَلٰی وَجۡهِهٖۤ اَهۡدٰۤی اَمَّنۡ یَّمۡشِیۡ سَوِیًّا عَلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۲۲
- قُلۡ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَكُمۡ وَ جَعَلَ لَكُمُ السَّمۡعَ وَ الۡاَبۡصَارَ وَ الۡاَفۡـِٕدَۃَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡكُرُوۡنَ ﴿۲۳
- قُلۡ هُوَ الَّذِیۡ ذَرَاَكُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ اِلَیۡهِ تُحۡشَرُوۡنَ ﴿۲۴
- وَ یَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی هٰذَا الۡوَعۡدُ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۲۵
- قُلۡ اِنَّمَا الۡعِلۡمُ عِنۡدَ اللّٰهِ ۪ وَ اِنَّمَاۤ اَنَا نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۲۶
- فَلَمَّا رَاَوۡهُ زُلۡفَۃً سِیۡٓـَٔتۡ وُجُوۡهُ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا وَ قِیۡلَ هٰذَا الَّذِیۡ كُنۡتُمۡ بِهٖ تَدَّعُوۡنَ ﴿۲۷
- قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ اَهۡلَكَنِیَ اللّٰهُ وَ مَنۡ مَّعِیَ اَوۡ رَحِمَنَا ۙ فَمَنۡ یُّجِیۡرُ الۡكٰفِرِیۡنَ مِنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ ﴿۲۸
- قُلۡ هُوَ الرَّحۡمٰنُ اٰمَنَّا بِهٖ وَ عَلَیۡهِ تَوَكَّلۡنَا ۚ فَسَتَعۡلَمُوۡنَ مَنۡ هُوَ فِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۲۹
- قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ اَصۡبَحَ مَآؤُكُمۡ غَوۡرًا فَمَنۡ یَّاۡتِیۡكُمۡ بِمَآءٍ مَّعِیۡنٍ ﴿۳۰
সুরা মূলক বাংলা উচ্চারণ
সুরা মূলকের প্রতিটি আয়াতে আল্লাহর ক্ষমতা, সৃষ্টিজগতের নিখুঁত ভারসাম্য এবং মানুষের জবাবদিহিতা সম্পর্কে গভীর শিক্ষা রয়েছে। নিচে এই সুরার সম্পূর্ণ বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলো:
সতর্কবার্তা: বাংলা উচ্চারণ শুধুমাত্র বোঝার ও সহায়তার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। সঠিক তেলাওয়াতের জন্য আরবি ভাষা শেখা ও শুদ্ধ উচ্চারণ অপরিহার্য। ভুল উচ্চারণের কারণে অর্থের পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা গুনাহের কারণ হতে পারে।
সুরা মূলকের প্রথম দশ আয়াত বাংলা উচ্চারণ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১. তাবা-রকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর।
২. আল্লাযী খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়া-তা লিইয়াবলুওয়াকুম আইয়ুকুম আহছানু‘আমালাওঁ ওয়া হুয়াল ‘আঝীঝুল গাফূর।
৩. আল্লাযী খালাকা ছাব‘আ ছামা-ওয়া-তিন তিবা-কান মা- তারা- ফী খালকির রাহমা-নি মিন তাফা-উত ফারজি‘ইল বা-ছ-রা হাল তারা- মিন ফুতূর।
৪. ছু ম্মার জি‘ইলবাসারা কাররাতাইনি ইয়ানকালিব ইলাইকাল বাসারু খা-ছিআওঁ অ হুয়া হাছীর ।
৫. ওয়া লাকাদ ঝাইয়ান্নাছ ছামা-আদ্দুনইয়া- বিমাসা-বীহা ওয়াজা‘আলনা- হা- রুজূমাল লিশশায়া-তীনি ওয়া আ‘তাদনা- লাহুম ‘আযা- বাছছা‘ঈর।
৬. ওয়া লিল্লাযীনা কাফারূবিরাব্বিহিম ‘আযা- বুজাহান্নামা ওয়াবি’ছাল মাসীর।
৭. ইযাউলকূফীহা- ছামি‘উ লাহা- শাহীকাওঁ ওয়াহিয়া তাফূর।
৮. তাকা- দুতামাইয়াঝুমিনাল গাইজি কুল্লামাউলকিয়া ফীহা- ফাওজুন ছাআলাহুম খাঝানাতুহা আলাম ইয়া’তিকুম নাযীর।
৯. কা- লূবালা- কাদ জাআনা- নাযীরুন ফাকাযযাবনা- ওয়া কুলনা- মানাঝঝালাল্লা- হু মিন শাইয়ীন ইন আনতুম ইল্লা- ফি দালা- লিন কাবীর।
১০. ওয়া কা-লূলাও কুন্না- নাছমা‘উ আও না‘কিলুমা- কুন্না-ফীআসহা-বিছছা‘ঈর।
মধ্যবর্তী দশ আয়াত বাংলা উচ্চারণ
১১. ফা‘তারাফূবিযামবিহিম ফাছুহকালিলআসহা-বিছ ছা‘ঈর।
১২. ইন্নাল্লাজিনা ইয়াখশাওনা রাব্বাহুম বিলগাইবি লাহুম মাগফিরাতুওঁ ওয়া আজরুন কাবীর।
১৩. ওয়া আছিররূকাওলাকুম আবিজহারূবিহী ইন্নাহূ‘আলীমুম বিযা- তিসসুদূ র।
১৪. আলা- ইয়া‘লামুমান খালাকা ওয়া হুওয়াল্লাতীফুল খাবীর।
১৫. হুওয়াল্লাযী জা‘আলা লাকুমুল আরদা যালূলান ফামশূফী মানা-কিবীহা- ওয়া কুলূমির রিঝকিহী ওয়া ইলাইহিন নুশূর।
১৬. আ আমীনতুম মান ফিছছামাই আইঁ ইয়াখছিফা বিকুমুল আরদা ফাইযা- হিয়া তামূর।
১৭. আম আমিনতুম মান ফিছছামাই আইঁ ইউরছিলা ‘আলাইকুম হা-সিবান ফাছাতা‘লামূনা কাইফা নাযির।
১৮. ওয়া লাকাদ কাযযাবাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ফাকাইফা কা- না নাকীর ।
১৯. আওয়ালাম ইয়ারাও ইলাত্তাইরি ফাওকাহুম সাফফা-তিওঁ ওয়াইয়াকবিদন । মাইউমছিকুহুন্না ইল্লার-রাহমা-নু ইন্নাহুবিকুল্লি শাইয়িম বাসির।
২০. আম্মান হা-যাল্লাযি হুওয়া জুনদুল্লাকুম ইয়ানসুরুকুম মিন দূ নিররাহমা-নি ইনিল কাফিরূনা ইল্লা- ফী গুরূর।
শেষের দশ আয়াত বাংলা উচ্চারণ
২১. আম্মান হা- যাল্লাযি ইয়ারঝকুকুম ইন আমছাকা রিঝকাহূ বাল্লাজ্জূফি ‘উতুওবিওয়া নুফূর।
২২. আফামাইঁ ইয়ামশী মুকিব্বান ‘আলা- ওয়াজহিহী আহদা আম্মাইঁ ইয়ামশী ছাবি ইঅ্যান ‘আলা-সিরা-তিমমুছতাকীম।
২৩. কুল হুওয়াল্লাযীআনশাআকুম ওয়া জা‘আলা লাকুমুছছাম‘আ ওয়াল আবসা-রা ওয়াল আফইদাতা কালীলাম মা-তাশকুরূন।
২৪. কুল হুওয়াল্লাযী যারাআকুম ফিল আরদিওয়া ইলাইহি তুহশারূন।
২৫.ওয়া ইয়াকূলূনা মাতা-হা-যাল ওয়া‘দুইন কুনতুম সা-দিকীন।
২৬. কুল ইন্নামাল ‘ইলমু‘ইনদাল্লা- হি ওয়া ইন্নামাআনা নাযীরুম মুবীন।
২৭. ফালাম্মা-রাআওহু ঝুলফাতান ছীআত ঊজূহুল্লাযীনা কাফারূওয়া কীলা হা-যাল্লাযী কুনতুম বিহী তাদ্দা‘ঊন।
২৮. কুল আরাআইতুম ইন আহলাকানিয়াল্লা-হু অ-মাম্মা‘ইয়া আও রাহিমানা- ফামাইঁ ইউজীরুল কা-ফিরীনা মিন ‘আযা-বিন আলীম।
২৯. কুল হুওয়াররাহমা-নু আ-মান্না-বিহী ওয়া‘আলাইহি তাওয়াক্কালনা-, ফাছাতা‘লামূনা মান হুওয়া ফি দালা-লিম মুবীন।
৩০. কুল আরাআইতুম ইন আছবাহা মাউকুম গাওরান ফামাইঁ ইয়া’তিকুম বিমাইম মা’ঈন।
(মাখরাজসহ উচ্চারণ শিখে নেওয়া জরুরি)।
সুরা মূলক বাংলা অর্থ
সুরা মূলক আমাদের শেখায় আল্লাহ সবকিছুর মালিক, তিনিই জীবন ও মৃত্যুর স্রষ্টা।
অতএব, মানুষকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে এবং সৎ আমল করতে হবে।
প্রথম দশ আয়াত বাংলা অনুবাদ
পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
(১) মহিমাময় সেই সত্তা, যার হাতে গোটা রাজত্ব। তিনি সকলকিছুর উপর পরিপূর্ণ শক্তিমান।
(২) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তোমাদের মধ্যে কে কর্মে অধিক উত্তম। তিনিই পরিপূর্ণ ক্ষমতার মালিক, অতি ক্ষমাশীল।
(৩) যিনি সপ্ত আসমান স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টিপাত করে দেখ, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?
(৪) অতঃপর বারবার দৃষ্টিপাত কর। দৃষ্টি ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে।
(৫) আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণও বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
(৬) আর যারা তাদের প্রতিপালকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। আর কতই না নিকৃষ্ট সেই প্রত্যাবর্তনস্থল!
(৭) যখন তাদেরকে তাতে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা তার বিকট গর্জন শুনতে পাবে। আর তা উথলিয়ে উঠবে।
(৮) ক্রোধে আক্রোশে জাহান্নাম ফেটে পড়ার উপক্রম হবে।। যখনই কোনো দলকে তাতে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তার প্রহরিরা তাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোনো সতর্ককারী আসেনি’?
(৯) তারা বলবে, ‘হ্যা, আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল। তখন আমরা (তাদের) মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আল্লাহ কিছুই নাজিল করেননি। তোমরা তো ঘোর বিভ্রান্তিতে পরে আছ’।
(১০) আর তারা আরও বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসিদের মধ্যে শামিল হতাম না’।
মাঝের দশ আয়াতের অনুবাদ
(১১) অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। অতএব, ধ্বংস জাহান্নামের অধিবাসিদের জন্য।
(১২) নিশ্চয়ই যারা তাদের রবকে না দেখেই ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।
(১৩) আর তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা তা প্রকাশ প্রকাশ্যে বল, নিশ্চয়ই তিনি অন্তরসমূহে যা আছে সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
(১৪) যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত।
(১৫) তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ কর এবং আর আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তাঁর নিকটই ফিরে যেতে হবে।
(১৬) তোমরা কি তোমাদেরকে নিরাপদ মনে করে নিয়েছ যে, যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদেরকে যমীনে বিধ্বস্ত করে দিবেন না যখন তা হঠাৎ থর থর করে কাঁপতে থাকবে?
(১৭) তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী ঝড়ো হাওয়া পাঠাবেন না? যাতে তোমরা জানতে পারবে যে, কেমন (ভয়ানক) ছিল আমার সতর্কবাণী।
(১৮) আর অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছিল। ফলে কেমন ছিল আমার শাস্তি!?
(১৯) তারা কি লক্ষ্য করেনি তাদের উপরস্থ পাখিদের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও গুটিয়ে নেয়? দয়াময় ছাড়া অন্য কেউ এদের স্থির রাখে না। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।
শেষের দশ আয়াতের অনুবাদ
(২০) পরম করুণাময় ছাড়া তোমাদের কি আর কোনো সৈন্য আছে, যারা তোমাদের সাহায্য করবে? কাফিররা তো শুধু ধোঁকায় নিপতিত।
(২১) অথবা এমন কে আছে, যে তোমাদের রিজিক দান করবে যদি আল্লাহ তাঁর রিজিক বন্ধ করে দেন? বরং তারা অহমিকা ও অনীহায় ডুবে আছে।
(২২) যে ব্যক্তি মুখে ভর দিয়ে ঝুকে চলে সে কি ঠিক পথে চলে, না কি সেই ব্যক্তি যে সরল পথে চলে?
(২৩) বলো, ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তকরণসমুহ দিয়েছেন। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।
(২৪) বলো, ‘তিনিই তোমাদের জমিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে সমবেত করা হবে’।
(২৫) আর তারা বলে, “তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে বল, এই প্রতিশ্রুতি কখন বাস্তবায়িত হবে?”
(২৬) বলো, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই কাছে আছে। আর আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।
(২৭) অতঃপর তারা যখন তা আসন্ন দেখতে পাবে, তখন কাফিরদের মুখমণ্ডল ম্লান হয়ে যাবে এবং বলা হবে, ‘এটাই হলো তা, যা তোমরা দাবি করছিলে’।
(২৮) বলো, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি’? যদি আল্লাহ আমাকে এবং আমার সঙ্গে যারা আছে, তাদের ধ্বংস করে দেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন, তাহলে কাফিরদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে কে রক্ষা করবে’?
(২৯) বলো, ‘তিনিই পরম করুণাময়। আমরা তাঁর প্রতি ইমান এনেছি এবং তাঁর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি। কাজেই তোমরা অচিরেই জানতে পাবে কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে’?
(৩০) বলঃ তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছ , কোনো এক ভোরে যদি পানি ভূ-গর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায় তাহলে কে তোমাদেরকে এনে দিবে প্রবাহমান পানি?
সুরা মূলকের শিক্ষা ও বার্তা
এই সুরা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়
- আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন ত্রুটি নেই।
- আখিরাত ও জবাবদিহিতার বাস্তবতা অবধারিত।
- কৃতজ্ঞতা ও আল্লাহভীতি সফল জীবনের চাবিকাঠি।
ফলস্বরূপ, নিয়মিত সুরা মূলক পাঠ করলে মন শান্ত থাকে, আল্লাহর প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়।
সুরা মূলক পাঠের ফজিলত
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা মূলক পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা মূলক পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।”
(মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ)
অতএব, এই সুরা কেবল পড়াই নয়, বুঝে আমল করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বোপরি, সুরা মূলক এমন একটি সুরা যা মুমিনের ঈমান, ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
তাই আমাদের উচিত নিয়মিত এটি পাঠ করা, মুখস্থ করা এবং জীবনে এর শিক্ষা বাস্তবায়ন করা।
সূরা আল-মুলক সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১. সূরা আল-মুলক কী সম্পর্কে?
সূরা আল-মুলক আল্লাহ তাআলার সার্বভৌম ক্ষমতা, সৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ, জীবন-মৃত্যুর উদ্দেশ্য এবং ঈমানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে।।
২. সূরা আল-মুলক পড়ার ফজিলত কী?
হাদীস অনুযায়ী, এই সূরা পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং এটি পাঠকারীর জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।
৩. সূরা আল-মুলক কখন পড়া উচিত?
রাতের বেলা, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে পড়া উত্তম। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নিয়মিত এটি রাতে পাঠ করতেন।
৪. সূরা আল-মুলকে কয়টি আয়াত আছে?
এই সূরায় মোট ৩০টি আয়াত আছে।
৫. সূরা আল-মুলক কোন সূরার আগে বা পরে অবতীর্ণ হয়েছিল?
এটি একটি মাক্কী সূরা, মক্কা যুগে ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক সময়ে অবতীর্ণ হয়।
৬. সূরা আল-মুলকের অর্থ কী?
“আল-মুলক” শব্দের অর্থ হলো “রাজত্ব” বা “সার্বভৌম শাসন”, যা আল্লাহর সর্বোচ্চ ক্ষমতা নির্দেশ করে।
৭. সূরা আল-মুলক শুনলে কি একই ফজিলত পাওয়া যায়?
অনেক আলেম বলেন, পাঠ করা ও শ্রবণ দুটিরই সওয়াব আছে, তবে পাঠ করায় অধিক ফজিলত রয়েছে।
৮. সূরা আল-মুলক মুখস্থ করার উপকারিতা কী?
মুখস্থ করলে দৈনিক পাঠ সহজ হয়, ঈমান দৃঢ় হয় এবং মৃত্যুর পর রুহের শান্তি লাভে সহায়ক হয়।
৯. সূরা আল-মুলক কবে অবতীর্ণ হয়?
নির্দিষ্ট সাল জানা না গেলেও এটি মক্কায় ইসলাম প্রচারের প্রারম্ভিক সময়ে অবতীর্ণ হয়েছিল।
১০. সূরা আল-মুলক কি কবরের আযাব থেকে রক্ষা করে?
হ্যাঁ, সহীহ হাদীস অনুযায়ী, সূরা আল-মুলক কবরের আযাব থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর অনুমতিতে সুপারিশ করে।




