পবিত্র হজ্ব পালনের সময় শুধু ইমান ও তাওয়াফই নয়, শারীরিক সক্ষমতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবের Ministry of Hajj and Umrah এখন এমন নিয়ম ঘোষণা করেছে, যেসব রোগ বা শারীরিক অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের হজে যেতে অনুমতি দেওয়া হবে না। দেশের আলোচনা ও পদক্ষেপ এখন সেই শর্তগুলো ঘিরে গড়াচ্ছে। তাই হজ্বের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এখন অত্যন্ত জরুরী।
অনুমতি না দেওয়া হওয়ার কারণ
– বড় সংখ্যায় মানুষ একসাথে এক জায়গায় ভিড় করে, তাপমাত্রা ওঠানামা হয়। হজের রীতিনির্বাহ অনেকটা সার্বিক শারীরিক চাপের মধ্য দিয়ে হয়।
– তাই এমন রোগ বা এমন শারীরিক অবস্থা যেগুলো সময়োপযোগী অ্যাকসেপ্টেবল নয়, যেমন যেখানে যাত্রী নিজে ঝুঁকিতে পড়বেন বা অন্যদের সেবা প্রদান কঠিন হবে সেসব নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোন শারীরিক শর্তগুলোতে হজ্বের অনুমতি দেওয়া যাবে না?
নিচে উল্লেখযোগ্য শর্তগুলোর তালিকা দেওয়া হলো যেগুলোতে হজ-অনুমতি বাতিল বা দেওয়া হবেনা:
- কিডনিতে ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন রোগ।
- গুরুতর হৃদরোগ (হৃদয় দুর্বলতা, এমন যে হজ রীতি পালনে সমস্যা হবে)।
- ফুসফুসের ক্রনিক বা এমন রোগ যেখানে অক্সিজেন পাল্টে বা নির্ভর করতে হয়।
- লিভার সিরোসিস বা গুরূতর লিভার ব্যাধি।
- গুরুতর স্নায়ুবিক বা মানসিক অসুস্থতা (যেমন স্মৃতিভ্রষ্টতা, ডিমেনশিয়া) বা অত্যন্ত বয়স্ক যাত্রী।
- শেষপ্রান্তিক গর্ভাবস্থা বা যেকোনো স্তরে উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা।
- সংক্রামক রোগ যেমন: খ্যাত যক্ষ্মা (টিউবারকিউলোসিস), ভাইরাল হেমোরাজিক জ্বর ইত্যাদি।
- ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী যারা কেমোথেরাপি বা ইমিউনোথেরাপি নিচ্ছেন — এমন যাত্রীরাও অনুমতি পাবেন না।
হজ্বযাত্রী প্রেরণকারী কর্তৃপক্ষের করণীয়
- প্রতিটি হজযাত্রীকে সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফর্ম বা প্ল্যাটফর্ম (যেমন Nusuk Masar)–এর মাধ্যমে বৈধ স্বাস্থ্যসনদ (medical certificate) সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- আগমন ও বহির্গমন সময় এই স্বাস্থ্যসনদের সত্যতা যাচাই করা হবে। কোথাও যদি অনুপস্থিত বা মিথ্যা তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যেসব হজপ্রত্যাশীদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত
- হজ্ব-পরিকল্পনার আগে নিজস্ব স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন, বিশেষ করে যদি আপুনি উচ্চবয়স বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধিতে আক্রান্ত হন।
- স্বাস্থ্যসনদ প্রস্তুত রাখুন এবং হজ সংক্রান্ত সংস্থা বা এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন যাতে সময়মতো সব নথি ঠিকঠাক হয়।
- যদি আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কারো মধ্যে কোনো গুরূতর রোগ বা শর্ত থাকার সন্দেহ হয় তাহলে হজের জন্য আবেদন করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- হজ্ব যাত্রাপথে শারীরিকভাবে সক্ষম থাকার জন্য নিয়মিত হাঁটা-ব্যায়াম, রক্তচাপ-রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস রাখতে হবে।
উপসংহার
হজ্ব একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত; তবে শারীরিকভাবে সক্ষম না হলে তা নিজে ও অন্যদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনায় স্পষ্ট যে, নির্দিষ্ট শারীরিক শর্তে থাকা ব্যক্তিদের হজে অংশগ্রহণ অনুমোদিত নয়। তাই হজের প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই নিজ স্বাস্থ্য যাচাই করা এবং সংগত নথি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
হজ্ব সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১️। হজ্ব কী?
উত্তর: হজ হলো ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, যেখানে সামর্থ্যবান মুসলমানরা জীবনে অন্তত একবার সৌদি আরবের পবিত্র মক্কায় গিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে ইবাদত সম্পন্ন করেন। এটি সামর্থ্যবানদের একটি ফরজ ইবাদত। প্রতি বছর ইসলামি মাস জিলহজ মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
২। ২০২৬ সালের হজ্বের খরচ কত?
উত্তর: ২০২৬ সালের সরকারি হজ প্যাকেজের খরচ তিনটি ভাগে নির্ধারিত হয়েছে: প্যাকেজ ১-এর জন্য ৬,৯৫,৫৯৭ টাকা, প্যাকেজ ২-এর জন্য ৫,৫৮,৮৮১ টাকা এবং প্যাকেজ ৩-এর জন্য ৪,৬৭,১৬৭ টাকা। বেসরকারি প্যাকেজের খরচও সংস্থাভেদে কিছুটা ভিন্ন হবে, তবে সরকারি প্যাকেজের কাছাকাছি বা তার চেয়ে সামান্য বেশি হতে পারে।
৩️। হজের জন্য কী ধরনের স্বাস্থ্যসনদ প্রয়োজন?
উত্তর: হজে যেতে হলে এখন সৌদি সরকার অনুমোদিত মেডিক্যাল সার্টিফিকেট (স্বাস্থ্যসনদ) বাধ্যতামূলক। এই সনদে প্রমাণ করতে হবে যে যাত্রী শারীরিকভাবে সক্ষম এবং সংক্রামক বা দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত। সনদটি Nusuk Masar Platform-এর মাধ্যমে যাচাই করা হয়।
৪️। কোন রোগ থাকলে হজ্বে যাওয়া যাবে না?
উত্তর: সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী নিচের রোগে আক্রান্তদের হজে অনুমতি দেওয়া হয় না:
- কিডনি ডায়ালাইসিস চলমান রোগী
- গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
- ফুসফুসের ক্রনিক রোগ (অক্সিজেন নির্ভর)
- লিভার সিরোসিস
- ক্যান্সার (কেমোথেরাপি বা ইমিউনোথেরাপি নিচ্ছেন)
- মানসিক রোগ বা স্মৃতিভ্রষ্টতা
- শেষপ্রান্তিক গর্ভাবস্থা বা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী নারী
- সংক্রামক রোগ যেমন টিবি বা ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বর
৫️। বয়স্ক মানুষ কি হজ্ব করতে পারবেন?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে শারীরিকভাবে সক্ষম হলে। যদি তিনি চলাফেরা করতে না পারেন বা গুরুতর স্নায়ুবিক বা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে হজের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৬️। হজ্বের জন্য বয়সসীমা কত?
উত্তর: সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই, তবে সাধারণভাবে ১২ বছরের নিচে শিশু এবং ৭৫ বছরের বেশি অক্ষম বয়স্ক ব্যক্তিরা উচ্চ ঝুঁকিতে গণ্য হন এবং তাদের জন্য আলাদা মেডিক্যাল যাচাই বাধ্যতামূলক।
৭️। গর্ভবতী নারী কি হজ্ব করতে পারেন?
উত্তর: গর্ভাবস্থার শেষপ্রান্তে (তৃতীয় ট্রাইমেস্টার) বা যেকোনো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় হজে অনুমতি দেওয়া হয় না। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে যেতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্যসনদ আবশ্যক।
৮️। হজ্বে যাওয়ার আগে কী প্রস্তুতি নিতে হবে?
উত্তর:
- বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা সংগ্রহ
- হজ ট্রেনিং সম্পন্ন করা
- মেডিক্যাল পরীক্ষা ও টিকা গ্রহণ
- আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়া
- হজ সংক্রান্ত অ্যাপ (যেমন Nusuk, Eatmarna) ইন্সটল করা
৯️। Nusuk Masar প্ল্যাটফর্ম কী?
উত্তর: Nusuk Masar হলো সৌদি আরবের অফিসিয়াল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে হজযাত্রীর মেডিক্যাল, ভিসা, ও অনুমোদন প্রক্রিয়া এক জায়গায় সম্পন্ন হয়। এখানে হজযাত্রীর স্বাস্থ্য সনদ যাচাই ও নিবন্ধন করা হয়।
১০। যদি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপযুক্ত ধরা পড়ে, কী হবে?
উত্তর: যদি কোনো হজযাত্রী স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপযুক্ত প্রমাণিত হন, তবে তার হজ আবেদন বাতিল করা হবে। কোনো এজেন্সি বা দেশ মিথ্যা তথ্য দিলে, তাদের বিরুদ্ধে সৌদি সরকার নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেবে।




