নাইটজার পাখি পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় নিশাচর প্রাণী। তারা রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে উড়ে। পাশাপাশি, তারা পোকামাকড়সহ অন্যান্য উড়ন্ত প্রাণী শিকার করে। ফলে, এই আচরণ তাদেরকে বিশেষ করে তোলে। এছাড়া, নাইটজারের অদ্ভুত চেহারা এবং অজানা শিকার পদ্ধতি মানুষকে মুগ্ধ করে।
প্রধান আবাস ও দেহের বৈশিষ্ট্য
নাইটজারের প্রধান আবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনাঞ্চল। তবে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও এদের দেখা মেলে।
তাদের দেহের রঙ মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে, বাদামী, ধূসর এবং সাদা ছাপ শিকারিদের চোখে পড়ে না। তাই তারা নিরাপদে থাকতে পারে।
নাইটজারের বড় চোখ, প্রশস্ত মুখ এবং দীর্ঘ পাখনা শিকারে দক্ষ করে। যদিও তাদের ছোট পা হাঁটার জন্য উপযুক্ত নয়, তবুও উড়ানোর সময় তা কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
নিশাচর শিকার পদ্ধতি
নাইটজারের বড় চোখ নিশাচর শিকার ধরার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। পাশাপাশি, তাদের প্রশস্ত মুখ এবং দীর্ঘ পাখনা শিকারে সাহায্য করে।
দৈনিক সময় তারা মাটিতে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যার পর তারা উড়তে শুরু করে। এছাড়া, মথ, পোকামাকড় এবং অন্যান্য উড়ন্ত প্রাণী এদের শিকার।
তাদের উড়ান নিঃশব্দ এবং মসৃণ। ফলে, শিকার ধরার সময় তাদের দক্ষতা অতুলনীয়। পাশাপাশি, রাতের অন্ধকারে এদের উপস্থিতি প্রায় অদৃশ্য হয়ে যায়।
গ্রেট ইয়ার্ড নাইটজার: ‘বেবি ড্রাগন’
গ্রেট ইয়ার্ড নাইটজার আকর্ষণীয় একটি প্রজাতি। যেহেতু তাদের মাথার বড় কানপাখি রয়েছে, তাই এদের ‘বেবি ড্রাগন’ বলা হয়।
এরা মাটিতে ডিম পাড়ে। উভয় পিতা-মাতা তা সংরক্ষণ করে। এছাড়া, গভীর বনাঞ্চল এদের বাসস্থানের জন্য নিরাপদ। মানুষ সহজে সেখানে পৌঁছাতে পারে না। তাই এদের সংরক্ষণ সহজ হয়।
রাতের নিঃশব্দ উড়ান এবং অদ্ভুত শিকার পদ্ধতি সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে। এছাড়া, এরা মানুষের দৃষ্টি এড়াতে খুব দক্ষ।
পুরনো কল্পকাহিনী ও বাস্তবতা
প্রাচীন কল্পকাহিনী অনুযায়ী, নাইটজার গাভীর দুধ চুষে খায়। তাই এদের নাম রাখা হয়েছিল ‘গোটসাকার’ (Goatsucker)।
তবে, বাস্তবে তারা শুধু পোকামাকড় খায়। সুতরাং, পুরনো বিশ্বাস এবং বাস্তবতার মিল না থাকাই নাইটজারের রহস্য আরও বাড়িয়েছে।
গবেষকরা মনে করেন, মানুষের এই ভুল ধারণা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। যদিও এরা নির্দোষ, মানুষের কল্পনাকে আকর্ষণ করে।
বাংলাদেশ ও ভারতের বনাঞ্চলে উপস্থিতি
বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন বনাঞ্চলে নাইটজার দেখা যায়। তারা গোপন স্থানে ডিম পাড়ে। এছাড়া, উভয় পিতা-মাতা তা সংরক্ষণ করে।
রাতের নিঃশব্দ উড়ান দর্শকের কৌতূহল জাগায়। পাশাপাশি, অদ্ভুত শিকার পদ্ধতি মানুষকে মুগ্ধ করে। পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, বনাঞ্চলে নাইটজারের দেখা পাওয়া একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এ কারণে, তারা প্রায় অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।

পরিবেশগত গুরুত্ব
নিশাচর পাখি হিসেবে নাইটজার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। তারা পোকামাকড় শিকার করে। ফলে, কৃষি ও বনাঞ্চলের ক্ষতি কমে।
নাইটজারের উপস্থিতি প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রকে সমর্থন করে। তারা ক্ষুদ্র প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে। বিশেষ করে, বনাঞ্চলে এদের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা বলছেন, এই রহস্যময় পাখি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
গবেষণার সুযোগ
বিজ্ঞানীরা এখনও নাইটজারের আচরণ এবং বাসস্থান নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তাদের রাতের নিঃশব্দ উড়ান এবং শিকার পদ্ধতি পুরোপুরি জানা যায়নি।
পাশাপাশি, নতুন তথ্য প্রতিদিন আবিষ্কৃত হচ্ছে। নাইটজারের রহস্য মানুষের কল্পনাকে উসকে দেয়। বিশেষ করে শিশু ও তরুণরা এদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। গবেষকরা এদের আচরণ বিশ্লেষণ করে পরিবেশ সংরক্ষণে নতুন কৌশল উদ্ভাবন করতে পারেন।
সর্বশেষ কথা
নাইটজার পাখি শুধু রহস্যময় নয়। তারা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের এক অনন্য উদাহরণ। রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দ উড়ান, অদ্ভুত শিকার পদ্ধতি এবং অদ্ভুত চেহারা পাঠকের কৌতূহল জাগায়।
বিজ্ঞানীরা এখনো তাদের আচরণ, শিকার পদ্ধতি এবং বাসস্থান নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। ফলে, নাইটজারের রহস্য প্রতিদিন নতুন তথ্য আবিষ্কার করে।
নিশাচর এই পাখি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের এবং জীববৈচিত্র্য প্রদর্শন করে। অতএব, এদের সংরক্ষণ আমাদের দায়িত্ব।