আয়াতুল কুরসি হলো কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও শক্তিশালী একটি আয়াত। এতে আল্লাহর একত্ব, সর্বজ্ঞান, ক্ষমতা এবং তার সত্তার গম্ভীর বর্ণনা রয়েছে। মুসলমানদের দৈনন্দিন ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। জানুন আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ ।
এই লেখায় আপনি আরও জানতে পারবেন আয়াতুল কুরসির ফজিলত, এবং সহিহ হাদিসসমূহ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর।
আয়াতুল কুরসির আরবি উচ্চারণ:
اللّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ، لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ، مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ، وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ، وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا، وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বিয়্যুম।
লা তা’খুজুহু সিনাতুন ওয়ালা নাওম।
লাহু মা ফিসসামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ।
মান যাল্লাযী ইয়াশফা’উ ইন্দাহু ইল্লা বিইজনিহ।
ইয়া’লামু মা বায়না আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম।
ওয়ালা ইউহীতোনা বিশাইই’ম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা’আ।
ওয়াসি’আ কুরসিইউহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ।
ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা।
ওয়াহুয়াল আলিয়্যুল আজিম।
সতর্কতা: বাংলা উচ্চারণ কেবল সহায়ক হিসেবে। তেলাওয়াত করার জন্য আরবি শেখা ও শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করা আবশ্যক, না হলে অর্থের বিকৃতি ঘটতে পারে। ফলে গুনাহ হতে পারে।
আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ:
আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদা বিদ্যমান। তাঁকে তন্দ্রা কিংবা ঘুম স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই তাঁর।
কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করতে পারে?
তিনি জানেন যা কিছু মানুষের সামনে ও পেছনে আছে। তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন শুধু ততটুকু ছাড়া।
তাঁর ‘কুরসি’ (সিংহাসন) আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টন করে আছে। সেগুলোর হেফাজত করা তাঁর জন্য কঠিন নয়। আর তিনিই সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
১. নামাজের পর পড়লে জান্নাতের নিশ্চয়তা
ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে, জান্নাতে প্রবেশে শুধু মৃত্যু বাদে আর কোনো বাধা থাকে না। (নাসায়ি: ৯৯২৮)
২. রাতে পড়লে শয়তান থেকে রক্ষা
শোবার আগে পড়লে একজন ফেরেশতা রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং শয়তান রাতে ঘেঁষতে পারে না।
৩. শয়তান ঘর থেকে দূরে থাকে
আয়াতুল কুরসি পড়লে ঘর থেকে শয়তান দূরে থাকে।
৪. আল্লাহর একত্বের দৃঢ় প্রমাণ
এই আয়াত আল্লাহর একত্ব, সর্বজ্ঞতা এবং ক্ষমতার এক অনন্য প্রকাশ।
আয়াতুল কুরসি সম্পর্কিত হাদিস
সহিহ হাদিসে আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব
শয়তানের কাহিনি:
আবু হুরায়রা (রাঃ) রমজানে সদকার পাহারা দিচ্ছিলেন। এক রাতে চোর এসে ধরা পড়ে এবং নিজেকে গরিব বলে ছেড়ে দিতে বলে। পরের দিন রাসূল (সাঃ) বলেন, “সে আবার আসবে।”
তৃতীয় দিন চোর জানায়, আয়াতুল কুরসি পড়লে রাতে শয়তান আসে না। পরে রাসূল (সাঃ) বলেন, “সে তোমাকে সত্য বলেছে, যদিও সে মিথ্যাবাদী। সে ছিল শয়তান।”
(সহিহ বুখারি)
জ্ঞানের মর্যাদা:
উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “আল্লাহর কিতাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত কোনটি?” তিনি বলেন, “আয়াতুল কুরসি।” রাসূল (সাঃ) বলেন, “তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম!”
(মুসলিম: ১৭৭০)
কুরআনের চূড়া:
রাসূল (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক কিছুর একটি চূড়া থাকে। কুরআনের চূড়া হলো সূরা বাকারাহ। এতে এমন একটি আয়াত আছে যা সকল আয়াতের নেতা- সেটি হলো আয়াতুল কুরসি।”
(তিরমিজি: ৩১১৯)
জাল হাদিস সম্পর্কে সতর্কতা
বিভিন্ন সময়ে আয়াতুল কুরসি নিয়ে কিছু জাল হাদিস প্রচারিত হয়। তাই সব সময় বিশ্বস্ত হাদিসগ্রন্থ (যেমন: বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি) থেকে যাচাই করে নেয়া জরুরি।
আয়াতুল কুরসির ব্যাখ্যা ও কিছু প্রশ্নোত্তর
আয়াত শব্দের অর্থ কী?
আয়াত মানে নিদর্শন বা চিহ্ন। কুরআনের প্রতিটি বাক্যকে “আয়াত” বলা হয়।
কুরসি শব্দের অর্থ কী?
“কুরসি” বলতে বোঝানো হয় আল্লাহর সিংহাসন বা তার কর্তৃত্বের সীমাহীনতা।
বিপদে পড়লে কী দোয়া পড়তে হয়?
- لا حولَ وَلا قُوَّةَ إِلّا بِالله (আল্লাহ ছাড়া শক্তি ও ক্ষমতা নেই)।
- إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ (আমরা আল্লাহর এবং তার দিকেই ফিরে যাব)।
কোরআনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সূরা কোনটি?
- সূরা আল-ফাতিহা, যাকে ‘উম্মুল কুরআন’ বলা হয়।
- তবে আয়াতুল কুরসি কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে বিবেচিত।
মহান আল্লাহ্ আমাদের ভুল ত্রুতি ক্ষমা করে সর্ব প্রথম আমাকে এবং এরপর আপনাদের সকলকে নিয়মিত আয়াতুল কুরসি সঠিক ভাবে তেলাওয়াতের তাওফিক দান করুন। (আমীন)




