বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কিত বহুল আলোচিত মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল–১। একই মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হওয়ায় লঘুদণ্ড হিসেবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।
“হাসিনা–কামালের মৃত্যুদণ্ড” ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা
আজ (১৭/১১/২৫) সোমবার দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করে। রায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালত জানায়।
- প্রথম অভিযোগে: আমৃত্যু কারাদণ্ড
- দ্বিতীয় অভিযোগে: মৃত্যুদণ্ড
এই রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম, যেখানে কোনো সাবেক সরকারপ্রধানকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত করা হলো।
ট্রাইব্যুনালের মতে অভিযোগের প্রমাণ
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “পদ্ধতিগত ও ব্যাপক দমন–পীড়নের” নির্দেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়-
- এসব কর্মকাণ্ডে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত
- ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত, অঙ্গহানি বা নির্যাতনের শিকার
- রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী ও রাজনৈতিক সংগঠনের ক্যাডাররা অভিযানে অংশ নেয়
ট্রাইব্যুনাল জানায়, মামুন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে সত্য প্রকাশ করায় তার সাজা কমানো হয়।
এসব অভিযোগকে কেন্দ্র করে জমা পড়েছে ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রমাণ
প্রসিকিউশন জমা দেয়:
- ২,০১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র
- ৪,০০৫ পৃষ্ঠা জব্দ তালিকা ও দলিল
- ২,৭২৪ পৃষ্ঠা শহীদদের তালিকা
এ বিশাল পরিমাণ নথিপত্রের ভিত্তিতেই আদালত সিদ্ধান্ত নেয়।
রায় ঘোষণায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সদস্য, সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও জুলাই আন্দোলন-সমর্থিত দলগুলোর নেতাকর্মীরাও সতর্ক অবস্থানে ছিল।
লাইভ সম্প্রচারে রায় দেখেন দেশবাসী
রায়ে দেশের জনগণের আগ্রহ বিবেচনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলে শুনানি ও রায় সাম্প্রচারিত হয়। রাজধানীর একাধিক পয়েন্টে বড় পর্দায়ও সরাসরি দেখানো হয়।
আশ্রয়ে ভারত – পলাতক দুই আসামি
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি ছিলেন সাবেক আইজিপি মামুন, যিনি পরে রাজসাক্ষী হন।




