বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

কালিমা তাইয়্যেবা ও শাহাদাতের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

বহুল পঠিত

একজন মুসলিমের জীবনের মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো ঈমান। ঈমান না থাকলে কঠিন কিয়ামতের দিন কেউ পার পাবেনা,ঈমান ব্যতিরেকে অন্য ভাল আমল কোন কাজে আসবে না। ঈমানের মুল ভিত্তি হলো কালিমা। ইহাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং তদানুযায়ী আমল করার মাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণ হয়। ঈমানদার ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বত্র সফলতা অর্জন করে। চলুন জেনে নেই কালিমা তাইয়্যেবা ও শাহাদাতের বাংলা উচ্চারণ,অর্থ ও ফজিলতসহ বিস্তারিত।

কালেমা তাইয়্যেবা এবং  কালেমা শাহাদাত হলো ঈমানের মূল ভিত্তি, যা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।

কালিমা তাইয়্যেবা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

কালেমা তাইয়্যেবার দুটি অংশ। প্রথম অংশটি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সূরা সাফফাত ৩৫ নং আয়াতে এবং দ্বিতীয় অংশ ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ সূরা ফাতহ এর ২৯ নম্বর আয়াতে বিদ্যমান। 


কালেমা তাইয়্যেবাঃ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُولُ ٱللَّٰهِ

বাংলা উচ্চারণঃ ” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”

 অর্থঃ “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই

কালিমা তাইয়্যেবা একজন মুসলিমের সবচেয়ে মৌলিক ও তাওহীদের ঘোষণা। এটি মুমিনের অন্তরের ভেতরে যেমন গেঁথে যায়, তেমনি তাঁর জীবন, কর্ম ও চরিত্রেও এর প্রতিফলন ঘটে।

কালেমা শাহাদাতের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

কালেমা শাহাদাতঃ (أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ)

বাংলা উচ্চারণঃ “ আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।“

অর্থঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ (উপাস্য) নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল।”

কালেমা শাহাদাত মুখে উচ্চারণ করার মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং তার রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত রক্ষা হয়। তার ভেতরের বিশ্বাস যাচাই করা আল্লাহর উপর ন্যস্ত।

কালেমা তাইয়্যেবার ফজিলত

কালেমা তাইয়্যেবা পাঠকারীর উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়

হাদীস: ইতবান ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সেই ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৩)

হাদীস: উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি এ কথা জানা অবস্থায় মারা যাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম)

কালেমা তাইয়্যেবা পাঠকারী কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহর সুপারিশ পাবেন

হাদীস: আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভে কে সবচেয়ে বেশি ধন্য হবে? তিনি বললেন: “যে ব্যক্তি নিজের অন্তর বা নফস থেকে খালিসভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ লাভে সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৯; উল্লেখ্য: কিছু বর্ণনায় “খালিসভাবে” কথাটি থাকার কারণে এটি মুখে উচ্চারণের চেয়ে অন্তরের বিশ্বাসের গুরুত্বকে ফুটিয়ে তোলে।)

কালেমা তাইয়্যেবা মুমিনকে কবরে দৃঢ় রাখে

হাদীস: বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো মুসলিমকে কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।’ এটাই হলো আল্লাহ তা’আলার এই বাণীর অর্থ: “যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত বাণীর (কালেমার) অবলম্বনে দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।” (সূরা ইবরাহীম: ২৭) (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৬৯)

কালেমা তাইয়্যেবা আল্লাহকে স্মরণ করার সর্বোত্তম মাধ্যম

হাদীস: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা, আর তার সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫)(হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৫৯)

কালিমা তাইয়্যেবা  আত্মিক শুদ্ধতার ভিত্তি

ইবনে কাসীর ব্যাখ্যা করেন, এই বাক্যের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কুফর ও শিরক থেকে মুক্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহর একত্বে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে।

 

কালেমা শাহাদাতের গুরুত্বঃ

কালেমা শাহাদাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের (পাঁচ মূল ভিত্তি) মধ্যে সর্বপ্রথম।

কালিমা শাহাদাতের ফজিলত

খাঁটি বিশ্বাসের সাথে এই কালেমা পাঠকারীকে আল্লাহ জান্নাত দান করবেন।

এক বর্ণনায় এসেছে: “যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, এবং ঈসা (আ.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ও তাঁর কালিমা যা তিনি মারইয়ামের প্রতি নিক্ষেপ করেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ, আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। তার আমল যাই হোক না কেন।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৫)

কালিমা সম্পর্কে মতামত

ইবনে কাসীর বলেন, যেমন একটি ভালো গাছ গভীরভাবে মাটিতে প্রোথিত হয়ে আকাশমুখী ডালপালা ও নিয়মিত ফল দেয়, ঠিক তেমনি ঈমান ও তাওহীদও একজন মুমিনের অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে গিয়ে তার আমলে, আচরণে ও জীবনব্যবস্থায় এর সুফল প্রকাশ করে।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, এই উপমার মাধ্যমে আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন, তাওহীদ ও ঈমানের বাণী কেবল মুখে উচ্চারণযোগ্য নয়; বরং এর ভিত্তি থাকতে হয় অন্তরে, আর তা থেকে জন্ম নেয় সৎ কর্ম।

আরো পড়ুন

আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধর্মপ্রাণদের মিলন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ধর্মীয় ঐক্য ও শিক্ষা প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করল। সকাল নয়টার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এই মহাসম্মেলন সারা দেশ থেকে আগত মানুষের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

আলেমদের অবদান: সমাজ গঠনে তাদের অমূল্য ভূমিকা

বাংলাদেশে গুণীজনদের অবহেলা একটি দুঃখজনক বাস্তবতা, বিশেষত আলেমদের প্রতি। অথচ, সমাজ গঠনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। শৈশব থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জন্য আলেমদের রয়েছে নানামুখী কর্মসূচি।

হজ্বের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা: জানুন কোন রোগে মেলবে না অনুমতি

পবিত্র হজ্ব পালনের সময় শুধু ইমান ও তাওয়াফই নয়, শারীরিক সক্ষমতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবের Ministry of Hajj and Umrah এখন এমন নিয়ম ঘোষণা...
- Advertisement -spot_img

আরও প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ প্রবন্ধ