মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার জটিল কার্যপ্রণালী নিয়ে গবেষণা করে ২০২৫ সালে চিকিৎসায় নোবেল জয়ী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের চিকিৎসা তিনজন বিজ্ঞানী। তারা হলেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারি ই. ব্রুনকো, ফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের শিমন সাকাগুচি।
সোমবার (৭ অক্টোবর), বাংলাদেশ সময় বিকেলে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক অনুষ্ঠানে নোবেল কমিটি এবারের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।
রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষায় বড় অর্জন
নোবেল কমিটির মতে, মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাদের প্রতিদিন হাজারো জীবাণু থেকে রক্ষা করে। তবে এটি যদি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে, তাহলে তা শরীরের সুস্থ কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও আক্রমণ করতে পারে। ফলে, এই ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই তিন বিজ্ঞানীর গবেষণা ছিল ঠিক এই বিষয় নিয়েই। তারা দেখিয়েছেন, ‘রেগুলেটরি টি সেল’ নামের এক ধরনের বিশেষ কোষ শরীরের নিজের কোষের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণ ঠেকায়।
সাকাগুচির প্রথম আবিষ্কার
১৯৯৫ সালে জাপানি গবেষক শিমন সাকাগুচি প্রথম দেখান, শরীরে এমন একটি ইমিউন কোষ রয়েছে যা অটোইমিউন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর আগে মনে করা হতো, কেবল থাইমাসে ক্ষতিকর কোষ ধ্বংসের মাধ্যমেই শরীর রক্ষা পায়।
ফক্সপি৩ জিন আবিষ্কার
পরে, ২০০১ সালে মার্কিন গবেষক ম্যারি ব্রানকো ও ফ্রেড র্যামসডেল ‘ফক্সপি৩’ নামের একটি জিন আবিষ্কার করেন। এই জিন নিয়ন্ত্রণ করে রেগুলেটরি টি সেলের গঠন ও কাজ। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জিনে সমস্যা হলে আইপিইএক্স (IPEX) নামের অটোইমিউন রোগ দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত
তাদের সম্মিলিত গবেষণা ইমিউন সিস্টেম নিয়ে নতুন ধারণা দেয়। এতে বোঝা যায়, কেন সবাই গুরুতর অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হন না। পাশাপাশি, শরীর কীভাবে নিজের কোষকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখে-তাও পরিষ্কার হয়।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে ক্যাম্পে বলেন, “তাদের গবেষণা কেবল রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার জটিলতা বোঝায়নি। এটি ক্যানসার, অটোইমিউন রোগ এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসায়ও নতুন পথ দেখিয়েছে।”
বর্তমানে এই আবিষ্কারের ভিত্তিতে অনেক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ভবিষ্যতে এসব গবেষণা আরও উন্নত চিকিৎসার পথ দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে।




