৯ মাস পর খুলল সেন্ট মার্টিনের দ্বার
দীর্ঘ ৯ মাস পর খুলল সেন্ট মার্টিন দ্বীপ । আজ (১ নভেম্বর) থেকে আবারও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলো বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২,০০০ পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। তবে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবার মানতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা।
কক্সবাজার থেকে শুরু হবে যাত্রা
পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগের মতোই কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ চলাচল করবে। আইনগত কারণে উখিয়ার ইনানী ঘাট থেকে সরাসরি যাত্রা এখনো নিষিদ্ধ।
সরকারি সিদ্ধান্তে ভ্রমণ পুনরায় অনুমোদন
গত ২৭ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ, এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নীতিগত সম্মতি দেওয়া হয়। এর পরেই পুনরায় পর্যটকদের ভ্রমণের অনুমতি মেলে।
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে মানতে হবে ১২টি নির্দেশনা
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের জন্য ১২টি কঠোর নির্দেশনা জারি করে। এসব নিয়ম মানলেই দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হবে।
১. অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলবে না
বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না।
২. অনলাইন টিকিট বাধ্যতামূলক
সব পর্যটককে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট ক্রয় করতে হবে।
৩. সময়সূচি অনুযায়ী সীমিত ভ্রমণ
নভেম্বরে শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করা যাবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত্রিযাপন অনুমোদিত থাকবে, তবে ফেব্রুয়ারিতে সম্পূর্ণভাবে ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
৪. প্রতিদিন সীমিত পর্যটক প্রবেশ
প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন।
৫. রাতে সৈকতে কোনো আলো বা শব্দ নয়
রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বা বারবিকিউ পার্টি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
৬. জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা
কেওয়া বনে প্রবেশ, ফল সংগ্রহ বা বিক্রি করা যাবে না। সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ কোনো প্রাণীর ক্ষতি করা যাবে না।
৭. মোটরযান চলাচল বন্ধ
সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইক বা অন্য কোনো মোটরচালিত যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
৮. প্লাস্টিক ও পলিথিন নিষিদ্ধ
নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, চিপসের প্যাকেট, মিনিপ্যাক সাবান বা বোতল বহন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৯. নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক ব্যবহার
পর্যটকদের নিজের রিইউজেবল পানির বোতল বা ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের নতুন যুগ
এই পদক্ষেপ শুধু সেন্ট মার্টিন নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব পর্যটন খাতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করেই পর্যটন উপভোগ- এটাই এখন মূল লক্ষ্য।




