সূরা কাওসারের পরিচিতি
সূরা কাওসার হলো পবিত্র কুরআনুল কারীমের ১০৮ নম্বর সূরা এবং এটি কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরা। যদিও আয়াত সংখ্যা মাত্র তিনটি, তবুও এর শিক্ষা এবং বার্তা অসীম ও গভীর। আল্লাহ তাআলা এখানে রাসুলুল্লাহ ﷺ কে সান্ত্বনা, সম্মান এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।
মুখ্য শিক্ষা:
- আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা
- সালাত ও কোরবানি দ্বারা ইবাদত করা
- নবীজী ও তাঁর উম্মতের মর্যাদা স্মরণ রাখা
সূরা কাওসারের শানে নুজুল
“শানে নুজুল” অর্থ হলো সূরা বা আয়াত নাজিল হওয়ার পটভূমি।
রাসুলুল্লাহ ﷺ এর পুত্র কাসিম বা আবদুল্লাহ মৃত্যুবরণ করলে মুশরিকরা তাঁকে “অবতারহীন” বা নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগলো। বিশেষভাবে আস ইবন ওয়াইল বলেছিল, “মুহাম্মদ মারা গেলে তাঁর নামও শেষ হয়ে যাবে।” এই দুঃখের সময়ে আল্লাহ তাআলা সূরা কাওসার নাজিল করে রাসুলুল্লাহ ﷺ কে শান্তি ও সুখবর দিলেন। “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি।”
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়েছেন যে রাসুলুল্লাহর নাম ও সম্মান চিরকাল টিকে থাকবে।
নাজিল হওয়ার স্থান
বেশিরভাগ তাফসিরে সূরা কাওসার মক্কায় নাজিল হয়েছে।
- মক্কী সূরা: ইবনে কাসির ও তাবারীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী।
- কিছু মতানুসারে মদীনায় নাজিল হওয়াও বলা হয়েছে।
সূরা কাওসারের আরবি ও উচ্চারণ
আরবি:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰكَ الۡكَوۡثَرَ ؕ﴿۱﴾
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَ انۡحَرۡ ؕ﴿۲
اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الۡاَبۡتَرُ ﴿۳
বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
১। ইন্না আ’তইনাকাাল কাওসার।
২। ফা-সল্লি লি রব্বিকা ওয়ানহার।
৩। ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আ’বতার।
সূরা কাওসারের বাংলা অর্থ
১। নিশ্চয় আমি আপনাকে আল-কাউসার দান করেছি।
২। সুতরাং আপনার প্রভুর উদ্দেশে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।
৩। নিশ্চয় আপনার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ।
আয়াতের ব্যাখ্যা
১ম আয়াত:
“নিশ্চয় আমি আপনাকে আল-কাউসার দান করেছি।”
- “কাওসার” অর্থ অশেষ কল্যাণ, প্রচুর নেয়ামত, বা জান্নাতের নদী।
- হাদীস অনুযায়ী, এটি জান্নাতের একটি নদী, যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি, এবং পাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকার সমান।
- এটি হাশরের দিন নবীর উম্মতকে পানি পান করানোর উৎস হবে।
২য় আয়াত:
“সুতরাং আপনার প্রভুর উদ্দেশে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।”
- নছর শব্দের অর্থ হলো কোরবানি।
- এটি আল্লাহর প্রতি শারীরিক এবং আর্থিক ইবাদতের গুরুত্ব নির্দেশ করে।
- সালাত ও কোরবানী দুই ধরনের ইবাদত: শারীরিক ও আর্থিক, যা নবীজীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে।
৩য় আয়াত:
“নিশ্চয় আপনার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ।”
- পুত্র বা সন্তান না থাকার কারণে নবীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণকারীদের জন্য জবাব।
- আল্লাহ দেখিয়েছেন যে নবীজী ﷺ এর সম্মান ও বংশচিরকাল অক্ষুণ্ণ থাকবে।
- উম্মতের সংখ্যা এত প্রচুর হবে যে পূর্ববর্তী সব নবীর উম্মতের সমষ্টির চেয়েও অধিক হবে।
সূরা কাওসারের ফজিলত
- জান্নাতে হাউজে কাউসারের প্রতিশ্রুতি
- নবী ﷺ বলেছেন: “কাওসার হলো জান্নাতের নদী, যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি, এবং এর পাত্রের সংখ্যা আকাশের নক্ষত্রের সমান।”
- (সহিহ বুখারী ৬৫৮১, সহিহ মুসলিম ৪০০)
- সালাত ও কোরবানির নির্দেশ
- মুসলমানদের শেখানো হয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিয়মিত ইবাদত করা।
- নবীর শ্রেষ্ঠত্ব ও শত্রুর অপমান
- নবীজীর নাম ও সম্মান চিরজীবী, শত্রুদের নাম ইতিহাসে মুছে যাবে।
সূরা কাওসারের শিক্ষা
শত্রুদের অপমানে হতাশ হও না; আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সম্মান রক্ষা করেন।
আল্লাহর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হও।
নিয়মিত নামাজ ও কোরবানীর মাধ্যমে ইবাদত করো।




