বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার ধরণ বদলাচ্ছে। অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা ইতিমধ্যেই এআই ব্যবহার করে দ্রুত সংবাদ তৈরি, ছবি যাচাই, তথ্য বিশ্লেষণ এবং পাঠক-কেন্দ্রিক কনটেন্ট তৈরি করছে। বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
বাংলাদেশের নিউজরুমে এআই ব্যবহার
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমগুলোতে এআই ব্যবহার এখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও সম্ভাবনা অনেক। উদাহরণস্বরূপ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো হেডলাইন সাজানো, সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ, ভিডিও সম্পাদনা এবং গবেষণামূলক প্রতিবেদনে এআই ব্যবহার শুরু করেছে। এর ফলে সাংবাদিকরা অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে গুরুত্বপূর্ণ খবর বাছাই করতে পারছেন।
সাংবাদিকদের এআই ব্যবহার
‘মিডিয়া মেটামরফোসিস: এআই এবং বাংলাদেশি নিউজরুম ২০২৪’ শীর্ষক জরিপে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের অর্ধেকের বেশি (৫১%) এআই ব্যবহার করছেন। তবে নিউজরুমে আনুষ্ঠানিকভাবে এআই ব্যবহারের হার মাত্র ২০%।
এআই ব্যবহারকারী সাংবাদিকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় টুল হলো চ্যাটজিপিটি (৭৮%), এরপর গ্রামারলি (৫২%) এবং গুগল ট্রান্সলেট (৪৪%)। অন্যান্য জনপ্রিয় টুলের মধ্যে রয়েছে ক্যানভা (৩৭%), গুগল জেমিনি (১৯%), ডাল-ই ও অ্যাডোবি সেনসেই (প্রতিটি ১৫%), মিডজার্নি, টেবুলাও, ফ্যাক্টমাটা এবং টার্নিটিন (প্রতিটি ৭%)।
সংবাদমাধ্যমগুলোতে সবচেয়ে বেশি এআই ব্যবহার হচ্ছে ব্যাকরণ ও লেখার মান উন্নত করতে (৫২%), এছাড়া গবেষণা ও ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ে ব্যবহার হচ্ছে ৪৮%।
প্রশিক্ষণ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বাংলাদেশে এআইভিত্তিক সাংবাদিকতার উন্নতির জন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং নীতি-নৈতিকতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যেই ডাটা জার্নালিজম ও ডিজিটাল মিডিয়া কোর্স চালু করেছে, যা ভবিষ্যতে দক্ষ সাংবাদিক তৈরিতে সহায়ক হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে ‘এআই ইন জার্নালিজম’ শীর্ষক বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) এবং বাংলাদেশ আইসিটি অ্যান্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (বিন) ট্রাস্ট যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করেছে।
কর্মশালায় চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি এবং গুগল এআই স্টুডিও ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, কিভাবে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সংবাদ তৈরি, তথ্য যাচাই এবং নতুন আইডিয়া উদ্ভাবন করা যায়।
চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি
তবে এআই ব্যবহারের সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও এসেছে। ভুয়া খবর শনাক্তকরণ, ডিপফেক ভিডিও বা ভুয়া ছবি যাচাই, পাঠকের আস্থা ধরে রাখা এবং নৈতিক সাংবাদিকতা বজায় রাখা এখন বড় প্রশ্ন। কারণ, প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, ভুয়া তথ্য ছড়ানোর কৌশলও তত দ্রুত বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
বিআইজেএফ সভাপতি হিটলার এ. হালিম বলেন,
“এ ধরনের প্রশিক্ষণ সাংবাদিকদের জন্য সময়োপযোগী। এআইভিত্তিক টুলগুলো সাংবাদিকতার ভবিষ্যতকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। আমরা শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তব কাজে তা প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছি।”
বিন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন,
“আজকের সময় তথ্যপ্রযুক্তির। শুধু একাডেমিক সনদ নয়, এখন দরকার প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষতা। সাংবাদিকতার মতো দ্রুত পরিবর্তনশীল খাতে এআই ব্যবহারের দক্ষতা অর্জনই টিকে থাকার চাবিকাঠি।”
এআই সাংবাদিকতার জন্য হুমকি নয়। বরং এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে বাংলাদেশি সাংবাদিকতা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে সক্ষম হবে।