বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২০, ২০২৫

সূরা নাসের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

বহুল পঠিত

পবিত্র কুরআন মাজিদের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সূরাগুলোর মধ্যে একটি হলো সূরা নাস । সূরাটি পবিত্র কুরআনুল কারীমের সর্বশেষ অর্থাৎ ১১৪তম সূরা। জেনে নেই সূরা নাসের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সেইসাথে শানে নুযূল এবং ফজিলত।

সূরা নাসের  শানে নুযূল

এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে । সূরাটিতে ৬টি আয়াত ৯০টি আরবি হরফ (অক্ষর) রয়েছে। কুরআন তেলাওয়াতের পুরস্কার হিসেবে প্রতিটি হরফে ১০টি নেকি তেলাওয়াতকারীর আমলনামায় জমা হয়।

অনেকে মনে করেন এটি মদিনায় নবী কারিম (সাঃ)-কে জাদু করার ঘটনার সময় নাজিল হয়েছিল। তবে, অধিকাংশ আলেমের মতে এটি মক্কী সূরা হলেও, এর তাফসীর ও প্রয়োগ জাদু সংক্রান্ত ঘটনার সাথে সরাসরি যুক্ত।

সূরা নাস

قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۙ﴿۱﴾  مَلِکِ النَّاسِ ۙ﴿۲﴾﴾اِلٰهِ النَّاسِ ۙ﴿۳﴾مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ ۬ۙ الۡخَنَّاسِ ۪ۙ﴿۴﴾الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ ۙ﴿۵﴾مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ ﴿۶


সূরা নাসের বাংলা উচ্চারণ

১.কুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
২. মালিকিন্ নাস।
৩. ইলাহিন্ নাস।
৪. মিন্ শাররিল ওয়াস্ ওয়াসিল খান্নাস।
৫. আল্লাযী ইউওয়াসবিসু ফী ছুদুরিন্নাস।
৬.মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস।

 (মাখরাজসহ বিশুদ্ধ উচ্চারণ শিখে নেয়া খুবই জরুরি)

সূরা নাসের বাংলা অর্থ

১। বলুন: আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে (ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন যেন আমরা তাঁর কাছে আশ্রয় চাই, কারণ তিনিই মানুষের একমাত্র রব।

মানুষের অধিপতির (মালিকের) কাছে। (তিনিই প্রকৃত বাদশাহ এবং সবকিছুর ওপর তাঁরই সার্বভৌম ক্ষমতা।)

মানুষের উপাস্যের (মাবুদের) কাছে। (তিনি একমাত্র উপাসনা পাওয়ার যোগ্য সত্তা। এই তিনটি গুণের উল্লেখ করা হয়েছে, আশ্রয় প্রার্থনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব বোঝাতে)

কুমন্ত্রণাদাতা, আত্মগোপনকারী (খান্নাস) শয়তানের অনিষ্ট থেকে (এই শয়তান মানুষের অন্তরে খারাপ চিন্তা ও প্ররোচনা দেয়। একে ‘খান্নাস’ বলা হয়, কারণ যখন মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন সে পিছু হটে)

যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় (এই শয়তান সুযোগ বুঝে মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে ওয়াসওয়াসা দেয়, ঠিক যেমন সে রাসূল (সাঃ)-কে জাদু করে।)

 জ্বিন এবং মানুষের মধ্য থেকে। (শয়তান শুধুমাত্র জ্বিন জাতির নয়, মানুষের মধ্যেও এমন অনেকে আছে যারা কুমন্ত্রণা ও অসৎ কাজে প্ররোচনা দেয়।)

সূরা নাসের  ফজিলত

ইমাম ইবনে কাসীর এই সূরাটির ব্যাখ্যায় মূলত এর গুরুত্ব, আল্লাহর তিনটি গুণ- রব্বুন (প্রতিপালক), মালিক (অধিপতি), ইলাহ (মাবুদ/উপাস্য), এবং শয়তানের প্রকৃতি জাদুর প্রভাব– কে প্রধান্য দিয়েছেন।

তাফসীর ইবনে কাসীর অনুসারে, সূরা নাস-এর মাধ্যমে আল্লাহর তিনটি প্রধান গুণের কাছে আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যমে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়, বিশেষত যখন সেই শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় বা জাদুর মতো মারাত্মক ক্ষতি করতে চায়।

সূরা নাস-এর তাফসীর শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায়

এই সূরাটি মূলত শয়তান ও মানুষের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার এক শক্তিশালী দোয়া। সূরা নাসের প্রথম তিন আয়াতে আল্লাহ নিজেকে তিনটি বিশেষণে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এই বিশেষণগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করাই হলো শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার মূল ভিত্তি: আমরা দুর্বল, আর শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে হলে এমন একজনের কাছেই যেতে হবে, যিনি একাধারে সৃষ্টিকর্তা (রব্ব), শাসক (মালিক) এবং মাবুদ (ইলাহ)। সেই একক সত্তা হলেন আল্লাহ্ (ক্বুল হু আল্লাহু আহাদ)। শয়তান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার বিপরীত শক্তি। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও চতুর। শয়তানের প্রকৃতি বুঝতে পারলে তার থেকে বাঁচা সহজ হয়। শয়তানকে খান্নাস বলা হয়, যার অর্থ হলো বারবার ফিরে আসা বা আত্মগোপনকারী। যখন মানুষ আল্লাহকে ডাকে, তখন শয়তান দূরে সরে যায়। কিন্তু যখনই আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হয়, তখনই সে আবার কুমন্ত্রণা নিয়ে ফিরে আসে।

সুরা নাস সংক্রান্ত হাদিস

হাদিস শরিফে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এই সুরা পড়ার গুরুত্ব এসেছে। এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ইখলাস, সূরা নাস ও সূরা ফালাক পড়বে মহান আল্লাহ্‌ তাকে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ রাখবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯০৩)

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর যাওয়ার পূর্বে নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন । তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ হতে শুরু করতেন। এরুপ তিনি তিনবার করতেন। (সহি বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

সূরা নাস হলো মানবজাতির সর্বাধিক শক্তিশালী প্রতিরক্ষার অস্ত্র হিসেবে আল্লাহর দেওয়া একটি নেয়ামত। শয়তান মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু, যা রক্তে চলাচলকারী জিন শয়তান বা সমাজের মানুষ শয়তানের বেশে আসতে পারে। এই মহাজাগতিক শত্রুর কবল থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহর একক ক্ষমতা, প্রতিপালকত্ব ও উপাস্যত্বে বিশ্বাস রেখে নিয়মিত এই সূরাগুলো পাঠ করা এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া অত্যাবশ্যক।

আরো পড়ুন

আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধর্মপ্রাণদের মিলন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ধর্মীয় ঐক্য ও শিক্ষা প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করল। সকাল নয়টার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এই মহাসম্মেলন সারা দেশ থেকে আগত মানুষের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

আলেমদের অবদান: সমাজ গঠনে তাদের অমূল্য ভূমিকা

বাংলাদেশে গুণীজনদের অবহেলা একটি দুঃখজনক বাস্তবতা, বিশেষত আলেমদের প্রতি। অথচ, সমাজ গঠনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। শৈশব থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জন্য আলেমদের রয়েছে নানামুখী কর্মসূচি।

হজ্বের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা: জানুন কোন রোগে মেলবে না অনুমতি

পবিত্র হজ্ব পালনের সময় শুধু ইমান ও তাওয়াফই নয়, শারীরিক সক্ষমতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবের Ministry of Hajj and Umrah এখন এমন নিয়ম ঘোষণা...
- Advertisement -spot_img

আরও প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ প্রবন্ধ