দীর্ঘ অপেক্ষা ও বিতর্কের পর পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টিতে ফিরছেন বাবর আজম । পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ এবং শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের জন্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে, যেখানে বাবর আজমকে আবারো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, এক বছরেরও বেশি সময় পর পাকিস্তান দলে ফিরছেন তিনি।
বাবর আজম: পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে শীর্ষ রান সংগ্রাহক
বাবর আজম, যিনি পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং একসময় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান ছিলেন, তার ৪২২৩ রান, ৩৬টি ফিফটি, এবং ৩টি সেঞ্চুরি ইতোমধ্যে তার ক্যারিয়ারের সাফল্যকে চিহ্নিত করেছে। তবে, তার স্ট্রাইক রেট এবং ব্যাটিং মনোভাব নিয়ে সমালোচনা ছিল। অনেকে অভিযোগ করেছেন, বাবর দলের চেয়ে নিজের পরিসংখ্যানেই বেশি মনোযোগ দেন, যার ফলে গত বছরের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর তাকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেয়া হয়।
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং বাবর আজমের অভাব নতুন করে প্রশ্ন তোলে, বাবরকে ছাড়া আসলে সমাধান কতটা সম্ভব? শেষমেশ, পিসিবি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। নির্বাচকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাবর আজমকে ফেরানো এবং তাকে নেতৃত্বের পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে আরও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা।
নতুন মুখ এবং পুরোনো যুদ্ধ: নাসিম শাহ এবং উসমান তারিক
এই স্কোয়াডে বাবর আজমের সঙ্গে নাসিম শাহ-এরও প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। তিনি গত এশিয়া কাপে ইনজুরির কারণে বাইরে ছিলেন, কিন্তু এখন পুনরায় স্কোয়াডে ফিরেছেন। তবে, নতুন মুখ হিসেবে স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন উসমান তারিক, যিনি সদ্য সমাপ্ত ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল)-এ ২০ উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন।
অন্যদিকে, ফখর জামান এবং হারিস রউফ-এর স্কোয়াডে জায়গা হয়নি। তারা থাকবেন রিজার্ভ তালিকায়। বাদ পড়েছেন তরুণ ব্যাটার মোহাম্মদ হারিস, যিনি গত কিছু সময়ে পাকিস্তানের বাঘা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
টুর্নামেন্টের তারিখ এবং ভেন্যু
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি অনুষ্ঠিত হবে রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোর-এ, ২৮ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর, একই ভেন্যুতে ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট, যেখানে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, এবং জিম্বাবুয়ে অংশগ্রহণ করবে।
পাকিস্তান ওয়ানডে দল: পরিবর্তন এবং নেতৃত্বের নতুন মঞ্চ
পাকিস্তানের ওয়ানডে দলও ঘোষণা করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের জন্য ১৬ সদস্যের দল নির্বাচিত হয়েছে। এই দলে পুনরায় জায়গা পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, যিনি অধিনায়কত্ব হারালেও তার স্কোয়াডে স্থান ধরে রেখেছেন। শাহিন আফ্রিদি-কে নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এবং ওয়ানডে দলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। ফয়সাল আকরাম, হারিস রউফ, এবং হাসিবউল্লাহ-ও স্কোয়াডে ফিরেছেন।
পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড:
- সালমান আলী আগা (অধিনায়ক)
- আবরার আহমেদ
- আব্দুল সামাদ
- বাবর আজম
- ফাহিম আশরাফ
- হাসান নেওয়াজ
- মোহাম্মদ নাওয়াজ
- মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র
- মোহাম্মদ সালমান মির্জা
- নাসিম শাহ
- সাহিবজাদা ফারহান
- সাইম আইয়ুব
- শাহিন শাহ আফ্রিদি
- উসমান খান (উইকেটকিপার)
- উসমান তারিক
রিজার্ভ:
- ফখর জামান
- হারিস রউফ
- সুফিয়ান মুকিম
পাকিস্তান ওয়ানডে স্কোয়াড:
- শাহিন শাহ আফ্রিদি (অধিনায়ক)
- আবরার আহমেদ
- বাবর আজম
- ফাহিম আশরাফ
- ফয়সাল আকরাম
- ফখর জামান
- হারিস রউফ
- হাসিবউল্লাহ
- হাসান নেওয়াজ
- হুসেইন তালাত
- মোহাম্মদ নাওয়াজ
- মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটকিপার)
- মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র
- নাসিম শাহ
- সাইম আইয়ুব
- সালমান আলী আগা
পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ
এই পরিবর্তন এবং নতুন মুখের স্কোয়াড পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। বাবর আজম এবং নাসিম শাহ-এর প্রত্যাবর্তন পাকিস্তানকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যদিও দলটির জন্য এখনও কঠিন প্রতিপক্ষের মোকাবেলা বাকি। পাকিস্তান ক্রিকেট পরবর্তী সিরিজগুলোতে দলের সাফল্য নিশ্চিত করতে একতার ও সামঞ্জস্যের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।




