বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী: ইসলামে সঠিকভাবে গোসলের পূর্ণাঙ্গ গাইড

বহুল পঠিত

ইসলাম ধর্ম মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গোসল, যা মানুষকে পরিচ্ছন্ন রাখে এবং আল্লাহর ইবাদতের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে।
আজকে আমরা সহজভাবে জানতে পারবো-
গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী, গোসলের সুন্নত, গোসল করার নিয়ম, এবং গোসলের উপকারিতা।

গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী?

ইসলামী শরীয়তের আলোকে গোসলের তিনটি ফরজ রয়েছে-

১. কুলি করা

গোসলের সময় পুরো মুখের ভেতর ভালোভাবে পানি পৌঁছানো ফরজ।

২. নাকের ভিতরে পানি পৌঁছানো

নাকের ভেতরের নরম অংশ পর্যন্ত পানি প্রবেশ করানো বাধ্যতামূলক।

৩. পুরো শরীর ভিজানো

শরীরের কোন অংশ শুকনা রাখা যাবে না। চুলের গোড়া পর্যন্ত ভিজাতে হবে।

এই তিনটি শর্ত পূরণ হলেই গোসল সহীহ হয়। ইসলামের সৌন্দর্য হলো- এর সব বিধান মানুষের কল্যাণ ও পরিচ্ছন্নতার জন্যই।

গোসলের সুন্নতগুলো কী কী?

ইসলামের শিক্ষা সবসময় সহজ ও উপকারী। অনেকে জানেন না যে, গোসলকে আরও সুন্দর করতে কিছু সুন্নত রয়েছে-

  • পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা
  • বিসমিল্লাহ
  • হাত ধোয়া
  • লজ্জাস্থান ধৌত করা
  • ওযুর মতো অঙ্গ ধোয়া
  • ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা
  • শরীরে পানি ঢালা
  • গোসল শেষে শুকনো জায়গায় দাঁড়িয়ে পানি ঝরানো

এসব সুন্নত মানলে গোসল আরো পরিপূর্ণ হয় এবং সুন্নাহ অনুযায়ী সম্পন্ন হয়।

কখন গোসল ফরজ হয়?

গোসল ফরজ হয় কিছু নির্দিষ্ট অবস্থায়-

  • স্বামী-স্ত্রীর মিলন: সহবাসের গোসল ফরজ হয়।
  • বীর্যপাত: ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলেও বা জেগে থাকা অবস্থায়, শারীরিক উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হলে গোসল ফরজ হয়।
  • নারীদের মাসিক (হায়েজ): হায়েজ বা মাসিক ঋতুস্রাব শেষ হলে গোসল ফরজ হয়।
  • সন্তান প্রসবের পর: সন্তান প্রসবের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যে রক্তস্রাব হয় (নিফাস), তা বন্ধ হয়ে গেলে গোসল ফরজ হয়। 

গোসল করার সঠিক নিয়ম (Step-by-Step Guide)

ইসলামে গোসলের নিয়ম খুবই সহজ- শরীরে কিংবা কাপরে কোন জায়গায় নাপাক থাকলে আগে ঐ অংশটা ভালভাবে পানি ধুয়ে ফেলতে হবে।

  1. নিয়ত করা
  2. বিসমিল্লাহ বলা
  3. ওজু করার মত করে দুই হাতের কবজি ধোয়া
  4. তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধৌত করা। পরে তাঁর হাত মাটিতে ঘষে বা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা।
  5. তিনবার কুলিকরা (গর গরা সহ কারে)
  6. নাকে পানি দেয়া (তিনবার)
  7. সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধৌত করা (তিনবার)
  8. দুই হাতের কনুই পর্যন্ত তিনবার করে ধোয়া
  9. মাথা মাসেহ করা
  10. কান মাসেহ করা
  11. পানি ঢালবে মাথার ডান পাশে, এরপর বাম পাশে
  12. অতঃপর মাথার মধ্যখানে পানি ঢালা
  13. পুরো শরীরে পানি পৌঁছে দেওয়া
  14. এরপর যাওয়ার সময় টাকনু পর্যন্ত ওজুর মত করে ধোয়া।

এভাবে গোসল করলে তা সুন্নাহ অনুযায়ী হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিও লাভ হয়।

গোসলের দোয়া (After Bath Dua)

নিদিষ্ট কোন দোয়া নেই। তবে যদি গোসল বাথরুমে না করা হয় , বিসমিল্লাহ-অজুর দোয়া পরতে পারেন।

গোসলের উপকারিতা (benefits of bathing)

শুধু ধর্মীয় কারণেই নয় – গোসলের রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।

  • শরীর পরিচ্ছন্ন থাকে
  • মানসিক প্রশান্তি আসে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
  • ত্বক ও চুল স্বাস্থ্যকর থাকে
  • নামাজসহ অন্য ইবাদতগুলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়

গোসল মানুষকে শারীরিক ও আত্মিক উভয় দিক থেকেই পবিত্র করে-এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।

ফরজ গোসলের হাদিস

মাইমূনা (রাযি.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন- আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করলেন, পা দুটো ব্যতীত এবং তাঁর লজ্জাস্থান ও যে যে স্থানে নোংরা লেগেছে তা ধুয়ে নিলেন। এরপর নিজের উপর পানি ঢেলে দেন। তারপর সেখান হতে সরে গিয়ে পা দু’টো ধুয়ে নিলেন। এই ছিল তাঁর জানাবাতের গোসল। (২৫৭, ২৫৯, ২৬০, ২৬৬, ২৭৪, ২৭৬, ২৮১; মুসলিম ৩/৯, হাদিস- ৩১৭, আহমাদ- ২৬৮৬১) (আধুনিক প্রকাশনী- ২৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৪৭)

আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী কারিম (সাঃ) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। এরপর সালাতের ওজুর মত ওজু করতেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। তারপর উভয় হাতের তিন আজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি ঢেলে দিতেন। (২৬২, ২৭২; মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৬, আহমাদ- ২৫৭০৪) (আধুনিক প্রকাশনী- ২৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৪৬)

গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী– এই সহজ গাইডটি আপনাকে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেবে। ইসলামে পরিচ্ছন্নতার যত গুরুত্ব, তা জানলে আমরা সবাই আরও সচেতনভাবে পবিত্রতা বজায় রাখতে পারি।

পবিত্রতা শুধু ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয়-এটি একটি সুন্দর, ইতিবাচক ও স্বাস্থ্যকর জীবনের মূল চাবিকাঠি।

গোসলের ফরজ সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১. গোসলের ফরজ কয়টি?

গোসলের ফরজ তিনটি

২. শুধুমাত্র পানিতে ঝাঁপ দিলে কি গোসল হয়ে যায়?

যদি তিনটি ফরজ পূরণ হয়-হ্যাঁ।

৩. মাথার চুল না ভিজলে গোসল সহীহ হবে?

না, চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে।

৪. ওযু ছাড়া গোসল হবে?

গোসলের ফরজ পূরণ হলে আলাদা করে ওযু করার দরকার নেই।

৫. গোসল কি এবং এর অর্থ কী?

গোসল হলো শরীরের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ পানিতে ধোয়া, যাতে শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতা বজায় থাকে।

৬. গোসলের ফরজ কয়টি ও কী কী?

গোসলের ফরজ মূলত তিনটি:

  • কুলি করা
  • নাকের ভেতরের পানি পৌঁছে দেওয়া
  • পুরো শরীর ভিজানো

৭. ফরজ গোসলের বিধান কী?

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে গোসল বাধ্যতামূলক, অন্যথায় নামাজ বা ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয়।

৮. গোসল কখন ফরজ?

  • স্বপ্নদোষ/বীর্যপাতের পর
  • সহবাসের পর
  • মাসিক বা নেফাস বন্ধ হওয়ার পর
  • শরীর নাপাক হওয়া

৯. কোন কোন কারণে শরীর নাপাক হয়?

  • যৌন সম্পর্ক
  • স্বপ্নদোষ
  • মেয়েদের মাসিক বা নেফাস

১০. গোসল কখন সুন্নত?

  • শুক্রবারের গোসল
  • ঈদের দিনের গোসল
  • জুমার নামাজের পূর্বে গোসল
  • রমজান বা অন্যান্য বিশেষ দিনে

১১. ফরজ গোসলের নিয়ম ও নিয়ত কী?

  • নিয়ত করুন: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গোসল করছি”
  • হাত ধুয়ে ওযুর মতো অঙ্গ ধোয়া
  • মাথা ও পুরো শরীর পানি দিয়ে ভিজানো

১২. গোসলের প্রথম ফরজ কী?

গোসলের প্রথম ফরজ হলো কুলি করা

১৩. মেয়েদের কখন গোসল ফরজ হয়?

  • মাসিক চক্র শেষ হওয়ার পর
  • নেফাস (সন্তান জন্মের পর রক্তস্রাব) শেষ হলে
  • স্বপ্নদোষের পর

১৪. গোসল সম্পর্কে কুরআন কি বলে?

কুরআনে বলা হয়েছে, পরিচ্ছন্নতা গুরুত্বপূর্ণ। (সূরা মাইদাহ, আয়াত ৬)

১৫. গোসল কত প্রকার এবং কি কি?

  • ফরজ গোসল
  • সুন্নত গোসল

১৬. নাওয়া শব্দের অর্থ কি?

নাওয়া শব্দের অর্থ- স্নান করা বা শরীরকে পানি দিয়ে ধোয়া বা গোসল করা।

১৭. গোসল ফরজ হওয়ার কারণ কয়টি ও কি কি?

  • যৌন মিলন
  • স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাত
  • মাসিক/নেফাস সমাপ্তি

১৮. কখন গোসল ফরজ হয় না?

যখন শরীর পবিত্র থাকে, শুধুমাত্র ওযু যথেষ্ট।

১৯. ফরজ গোসল না করে কোন কোন কাজ করা যায়?

  • খাওয়া, পান করা, রান্না করা: গোসল ফরজ হলেও এসব কাজ করা যায়, তবে সম্ভব হলে অজু করে নেওয়া উত্তম।
  • জিকির-আজকার ও দু’আ: জিকির, দু’আ, তাসবিহ, ইস্তিগফার ইত্যাদি করা যায়।
  • ঘরের অন্যান্য কাজ: কোনো ব্যক্তিগত বা ঘরের কাজ করা যাবে, যা ধার্মিক ভাবে নিষিদ্ধ নয়। 

২০. ফরজ গোসল না করে রান্না করা যাবে কি?

হ্যাঁ। যাবে।

২১. সহবাসের পর গোসল না করলে কি নামাজ হবে?

না, ফরজ গোসল না করলে নামাজ হবে না।

২২. মেয়েদের স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ কি?

হ্যাঁ, স্বপ্নদোষের পর গোসল করা আবশ্যক।

২৩. ফরজ গোসলের বিকল্প কী?

ফরজ গোসলের বিকল্প নেই, তবে ছোটখাটো অশুচিতা দূর করার জন্য ওযু সম্ভব।

২৪. স্বপ্নদোষ হলে কি নামাজ পড়া যাবে?

না, গোসল না করলে নামাজ গ্রহণযোগ্য নয়।

২৫. ফরজ গোসল না করে কোন কোন কাজ করা যায়?

হ্যাঁ যাবে। তবে গোসল করা জরুরী।

২৬. জানাবাত গোসল কি?

জানাবাতের গোসল হলো যৌনমিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো কারণে বীর্যপাতের পর অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য পুরো শরীর ধোয়া।

আরো পড়ুন

সূরা কদরের বাংলা অর্থ ও উচ্চারণ: লাইলাতুল কদরের মহিমা, আমল ও ফজিলত

পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুরা গুলোর মধ্যে সুরা কদর একটি। এই সূরা মূলত লাইলাতুল কদরের রাতের মহিমা এবং কুরআন নাজিল হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে। এই লেখায় সূরা কদরের বাংলা অর্থ ও উচ্চারণ, ফযিলত সহ সবকিছু জানব।

স দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম: অর্থপূর্ণ ও সুন্দর নামের তালিকা

আপনি কি আপনার সন্তানের জন্য সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ ইসলামিক নাম খুঁজছেন? বিশেষ করে স দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম আপনার জন্য হবে সহজ এবং ব্যবহারযোগ্য গাইড।

পেট ব্যথা কমানোর দোয়া — পেটব্যথা কমাতে শক্তিশালী ইসলামিক দোয়া

পেট ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও মুহূর্তের মধ্যে মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। অনেকে ওষুধ খেয়ে আরাম পেলেও, আবার অনেক সময় মানসিক চাপ, গ্যাস, বদহজম বা অন্যান্য কারণে পেট ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মুসলমান হিসেবে আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারি। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে- যে কোনো কষ্টে বা ব্যথায় দোয়া পড়লে আল্লাহ তাআলা শিফা দান করেন।
- Advertisement -spot_img

আরও প্রবন্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ প্রবন্ধ