বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা পানি এবং শহরে এডিস মশার বিস্তার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপকে দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। প্রতিদিন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, আর হাসপাতালে রোগীর চাপও বাড়তে থাকে। তাই ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
ডেঙ্গু জ্বর কী?
এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটি Aedes aegypti (এডিস) মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত এই মশা দিনের বেলাতেই কামড়ায়, বিশেষ করে সকাল ৯টা থেকে ১১টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। তবে ডেঙ্গু হালকা বা মারাত্মক দুইভাবেই হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণগুলো কী?
কয়েকটি সাধারণ এবং কয়েকটি বিপজ্জনক লক্ষণ রয়েছে। এগুলো চিহ্নিত করা খুব জরুরি।
সাধারণ লক্ষণ
- হঠাৎ জ্বর (১০২-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
- মাথাব্যথা, বিশেষ করে চোখের পেছনে চাপ
- শরীরব্যথা বা “হাড়ভাঙা জ্বর”
- বমি বমি ভাব
- ত্বকে লাল ফুসকুড়ি
- অতিরিক্ত দুর্বলতা
বিপজ্জনক লক্ষণ
- তীব্র পেট ব্যথা
- ঘন ঘন বমি
- নাক বা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
- প্রস্রাব কমে যাওয়া
- মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া উচিত।
জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন?
সব জ্বর ডেঙ্গু নয়। তবে উপরের উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করানো জরুরি। বিশেষ করে জ্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনেই NS1 এবং CBC টেস্ট করলে রোগ শনাক্ত সহজ হয়। তাই অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
ডেঙ্গু হলে বিশ্রাম কেন জরুরি?
ডেঙ্গু রোগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। একই সঙ্গে রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়। ফলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই বিশ্রাম, প্রচুর তরল এবং পানি গ্রহণ করা অপরিহার্য। দিনে অন্তত ১০-১২ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কী খাবেন?
ডেঙ্গুতে খাদ্যাভ্যাসের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যা খাবেন
- ডাবের পানি, ওআরএস বা স্যালাইন
- পেঁপে, জাম্বুরা, কমলার রস
- খিচুড়ি, ডাল, স্যুপ
- মাছ ও ডিম
যা এড়িয়ে চলবেন
- তেল-মসলা বা ভাজা খাবার
- কোল্ড ড্রিংকস
- জাঙ্ক ফুড
- দুধজাত খাবার (যদি বমি থাকে)
প্লেটলেটের অস্বাভাবিকতা: সতর্কতা কখন জরুরি?
ডেঙ্গু হলে প্লেটলেট কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে এটি ২০,০০০-এর নিচে নামলে বা রক্তপাত শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। মনে রাখতে হবে, সবসময় রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসকই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?
এ জ্বরের প্রত্যেক রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয় না। হালকা অবস্থায় বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব। তবে অতিরিক্ত দুর্বলতা, রক্তপাত, শ্বাসকষ্ট বা প্লেটলেট দ্রুত কমে গেলে হাসপাতালে ভর্তি জরুরি।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে?
সাধারণত ৪ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে। তবে জ্বর সেরে যাওয়ার পরের ২৪–৪৮ ঘণ্টা সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। তখন প্লেটলেট হঠাৎ কমতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ৭ থেকে ১০ দিন লাগতে পারে।
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
- খাওয়ায় অনীহা
- বারবার কান্না
- ঘুমে অস্বস্তি
- পেটে ব্যথা বা বমি
চিকিৎসা
- শিশুকে পর্যাপ্ত পানি বা তরল দিন
- প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যায় (ডাক্তারের পরামর্শে)
- Aspirin বা অন্য ব্যথানাশক কখনো নয়
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ। এজন্য বাড়ি ও আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত পানি জমে থাকা জায়গা পরিষ্কার করুন। পুরনো টায়ার, টব বা কন্টেইনারে যেন পানি না থাকে তা নিশ্চিত করুন। এছাড়া ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন।