দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য ও চিন্তার ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলাম ও আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল হলেন এমন দুই নাম, যারা কবিতার মাধ্যমে মুসলমানদের আত্মজাগরণের অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত করেছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই দুই কবির অবদান স্মরণ করে উদ্বোধনী অধিবেশনে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, “নজরুল ও ইকবাল দুজনেই এমন সময়ে কলম ধরেছিলেন, যখন উপমহাদেশে মুসলমানদের আত্মপরিচয় ও চেতনা বিলীন হতে বসেছিল। তাঁদের কবিতা ছিল সেই আত্মচেতনার আহ্বান।”

তিনি বলেন, “ইকবাল ছিলেন উচ্চশিক্ষিত দার্শনিক- অক্সফোর্ড থেকে মাস্টার্স, জার্মানি থেকে পিএইচডি এবং লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি করেছেন। অন্যদিকে নজরুল ছিলেন স্বশিক্ষিত প্রতিভা, যিনি ফারসি ভাষায় এমন দক্ষতা অর্জন করেছিলেন যা বাংলা সাহিত্যে অনন্য।”
ইকবালের ‘শিকওয়া’ ও ‘জবাব-এ-শিকওয়া’, আর নজরুলের ‘আনোয়ার’ কবিতার ভাবগত মিল তুলে ধরে ড. রহমান বলেন, “দুজনেই মুসলমানদের নিস্তেজতা ও আত্মবিস্মৃতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। ইকবাল যেমন মুসলমানদের আত্মসমালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন, নজরুলও একই সুরে প্রশ্ন তুলেছেন ‘কোথা খোঁজ মুসলিম শুধু কোন জানোয়ার?’”
তিনি আরও বলেন, “গাজায় গণহত্যা কিংবা বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন সবই প্রমাণ করে যে, আজও নজরুল-ইকবালের সেই জাগ্রত মুসলমান সমাজ গড়ে ওঠেনি। তাই তাঁদের সাহিত্যচর্চা আজও সময়ের দাবি।”
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগ যৌথভাবে আয়োজন করে এই সম্মেলনের, যার প্রতিপাদ্য ছিল “The Role of Iqbal and Nazrul Islam in National Awakening।”
সম্মেলনের চারটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় ১৮টি সেশন, যেখানে ২২টি দেশের ১২৭টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রথম দিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুশায়েরা ও গজল সন্ধ্যা, যেখানে দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান কবিরা অংশগ্রহণ করেন।
আয়োজকদের মতে, এই আয়োজনের লক্ষ্য ছিল নজরুল ও ইকবালের সাহিত্য, দর্শন ও চিন্তার আলোকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুসলিম রেনেসাঁর আদর্শ জাগিয়ে তোলা।




