বাংলাদেশের দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতি ও বাড়তে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ঘিরে আগ্রহ দেখাচ্ছে পাকিস্তানের বহু প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে খাদ্য, পোশাক, ফ্যাশন, প্রসাধনী এবং প্রযুক্তি খাতে তাদের আগ্রহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর লক্ষ্য বাংলাদেশের ভোক্তা
গত এক দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি উদীয়মান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের কিছু বড় ব্র্যান্ড এখন বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
লাইফস্টাইল ও পোশাক খাতে সক্রিয়তা
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড খাদি, স্যাফায়ার এবং গুল আহমেদ দেশের বাজার বিশ্লেষণ করছে।
তাদের লক্ষ্য যেভাবে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে সফল হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও ব্যবসা সম্প্রসারণ।
খাদ্যপণ্যে সরাসরি বিনিয়োগের পরিকল্পনা
বেক পার্লার, কার্শি ইন্ডাস্ট্রিজ, আহমেদ ফুডস, লাজ্জাত ফুডস ও দাশী ইন্টারন্যাশনাল-এই পাঁচটির বেশি পাকিস্তানি খাদ্য কোম্পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায়।
তারা মনে করে, সাফটা চুক্তির আওতায় শুল্ক সুবিধা পেলে প্রতিযোগিতামূলক দাম বজায় রাখা সহজ হবে। এছাড়া, কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশে কারখানা ও গুদাম গড়ার কথাও ভাবছে।
আহমেদ ফুডসের কর্মকর্তা তালহা রফিক জানান, তারা দুই দশক ধরে চেষ্টা করলেও আগে অনুমোদন পাননি। অন্যদিকে, লাজ্জাত ফুডস জানিয়েছে, তারা এক সময় বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও রাজনৈতিক কারণে বন্ধ করতে হয়। এখন তারা আবার নতুনভাবে বাজারে প্রবেশের উদ্যোগ নিচ্ছে।
প্রসাধনী ও হোম ডেকরেও আগ্রহ
খাবার ছাড়াও, হোম ডেকর, টেক্সটাইল ও কসমেটিকস খাতেও পাকিস্তানি কোম্পানিরা আগ্রহী।
চেন ওয়ান এবং নাভিয়া কসমেটিকস ইতোমধ্যে বাজার বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য অংশীদার খুঁজে দেখা শুরু করেছে।
নাভিয়া কসমেটিকসের রিজওয়ান আসগর রানা বলেন, “রাজনৈতিক বাধা থাকলেও বাজারের চাহিদা শেষ পর্যন্ত তা অতিক্রম করতে সাহায্য করবে।”
প্রযুক্তি ও ডিজিটাল খাতে সম্ভাবনা
শুধু ভোক্তা পণ্য নয়, ডিজিটাল খাতেও আগ্রহ বাড়ছে।
পাকিস্তানি ফিনটেক এবং স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কাজ করতে চায়।
বাংলাদেশে ১২ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিস্তার তাদের আকৃষ্ট করছে।
কিছু করাচিভিত্তিক স্টার্টআপ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অংশীদারিত্ব আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও লজিস্টিক ব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
চ্যালেঞ্জ এখনো রয়েছে
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “মান ও দাম গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি নয়।”
তবে চ্যালেঞ্জও আছে।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ভারতীয়, চীনা ও পশ্চিমা ব্র্যান্ড শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়া, দেশীয় কোম্পানিগুলোও বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
তাই পাকিস্তানি ব্র্যান্ডকে সফল হতে হলে ব্র্যান্ডিং, স্থানীয়করণ এবং কার্যকর ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক গড়তে হবে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
বাংলাদেশে পাকিস্তানি কোম্পানির প্রবেশ কেবল ব্যবসার সম্প্রসারণ নয়, বরং এটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির দিকেও একটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ। তবে তা বাস্তবায়নে দরকার নীতিনির্ধারকদের সহযোগিতা এবং নীতিগত স্থিতিশীলতা। টেক্সটাইল ব্যবসায়ী কাউসার আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশের নগরায়ণ এবং ক্রমবর্ধমান ভোক্তা শ্রেণি আঞ্চলিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করছে।”
সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের উত্থানশীল বাজার শুধু পশ্চিমা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোরও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।




