গণভোট হলো একটি বিশেষ নির্বাচন প্রক্রিয়া যেখানে জনগণ সরাসরি কোনো প্রস্তাব, আইন, সংবিধান বা নীতি বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মত প্রকাশ করে। এটি সাধারণ নির্বাচন থেকে আলাদা, কারণ এখানে কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল নয়, বরং নির্দিষ্ট প্রস্তাব বা নীতি থাকে ভোটের বিষয়।
বাংলাদেশে গণভোটের মাধ্যমে মূলত সংবিধান সংশোধন, শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের সরাসরি মত নেওয়া হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে গণভোটের ইতিহাস
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তিনটি গণভোট হয়েছে:
১৯৭৭ সালের গণভোট:

- তৎকালীন রাষ্ট্রপতি: জিয়াউর রহমান,
- বিষয়: রাষ্ট্রপতির প্রতি আস্থা ও তার কর্মসূচি,
- ফলাফল: হ্যাঁ – ৯৮.৯৭%, না – ১.১৩%
১৯৮৫ সালের গণভোট

- তৎকালীন রাষ্ট্রপতি: হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ
- বিষয়: রাষ্ট্রপতির নীতি ও ক্ষমতায় থাকা
- ফলাফল: হ্যাঁ – ৯৪.১৪%, না – ৫.৫%
১৯৯১ সালের গণভোট:

- বিষয়: রাষ্ট্রপতি শাসন থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় রূপান্তর
- ফলাফল: হ্যাঁ – ৮৪.৩৮%, না – ১৫.৬২%
প্রতিটি গণভোটে জনমতের প্রতিফলন ভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৯১ সালের গণভোটে মানুষ বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার পরও ভোট দেওয়ার হার ছিল ৩৫%।
গণভোটের প্রক্রিয়া কীভাবে হয়
- ভোটদানের ধরন: সাধারণ ভোটারদের সামনে প্রশ্ন থাকে।
- ভোটের বিকল্প: ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’।
- প্রশ্ন তৈরি হয় প্রস্তাবের ভিত্তিতে এবং ভোটারের কাছে বিস্তারিত জানানো হয়।
- উদাহরণ: যদি একটি দেশের বিভিন্ন ভাষা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ করতে হয়, গণভোটে ভোটাররা তাদের পছন্দমতো ভোট দেবে।
নতুন গণভোট: জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) ২০২৫

- তফসিল-১ এর প্রস্তাব: ৪৮টি প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত
- ভাষা ও নাগরিক পরিচয়
- মৌলিক অধিকার ও জরুরি অবস্থা
- রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, ক্ষমতা ও অভিশংসন
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
- সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব
- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
- গণভোট আয়োজনের ক্ষমতা:
- অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ আদেশ জারি করবে
- যদি প্রস্তাব পাস হয়, পরবর্তী সংসদ হবে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’
- ৯ মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করা হবে
- কবে হবে গণভোট:
- সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে
জনমতের গুরুত্ব ও প্রতিফলন
জেসমিন টুলির মতে, ১৯৯১ সালের গণভোটের বিষয় নিয়ে জনগণ প্রায় ৯০% নিশ্চিত ছিল। তবে, ১৯৮৫ সালের ভোটে মানুষ আগ্রহী না থাকার পরও ভোটের হার ছিল ৭২.১৫%। এটি দেখায় গণভোটে জনমতের গুরুত্ব কখনো কখনো সরাসরি ভোটের অংশগ্রহণে প্রকাশ পায়।
গণভোট হলো জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংবিধান ও নীতিমালা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে এটি সংবিধানগত পরিবর্তন এবং শাসন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর গণভোট জনগণের ক্ষমতা ও মতামতকে প্রধান গুরুত্ব দেবে।
বাংলাদেশে গণভোট সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
১। বাংলাদেশে কতবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে?
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তিনবার গণভোট হয়েছে। প্রথমটি ১৯৭৭ সালে, দ্বিতীয়টি ১৯৮৫ সালে এবং তৃতীয়টি ১৯৯১ সালে। প্রতিটি গণভোটের উদ্দেশ্য এবং বিষয় আলাদা ছিল।
২। গণভোট বাংলাদেশে কিভাবে হয়?
বাংলাদেশে গণভোট সাধারণ নির্বাচনের মতো ভোটকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে ভোট প্রদান করেন। এটি সাধারণ নির্বাচনের মতো প্রার্থী বা দলের প্রতি নয়, বরং কোনো নির্দিষ্ট প্রস্তাব বা নীতির পক্ষে বা বিপক্ষে জনগণের মতামত সংগ্রহের প্রক্রিয়া।
৩। গণভোট কি পৌরনীতি?
না, গণভোট কোনো পৌরনীতি নয়। এটি হলো জনগণের সরাসরি মতামত সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া, সাধারণত সংবিধান, আইন বা শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য।
৪। গণভোট কত প্রকার?
গণভোট প্রধানত দুই প্রকারের:
- সংবিধানগত গণভোট: সংবিধান প্রণয়ন বা সংশোধনের জন্য।
- নিয়মিত বা নীতিগত গণভোট: বিশেষ নীতি, আইন বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।
৫। গণভোটের প্রয়োজন কেন?
গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি মতামত নেওয়া যায়। এটি বিশেষভাবে সংবিধান সংশোধন, আইন প্রণয়ন, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন বা গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনসাধারণের অনুমোদন নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।
৬। ১৯৯১ সালের গণভোট সম্পর্কে তথ্য দিন।
১৯৯১ সালের গণভোটে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ভোট হয়। এতে ‘হ্যাঁ’ ভোট পায় ৮৪.৩৮% এবং ‘না’ ভোট পায় ১৫.৬২%। এটি ছিল জনগণের শক্তিশালী সমর্থনপ্রদর্শন, যা বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
৭। গণভোট ইংরেজিতে কীভাবে বলা হয়?
গণভোটকে ইংরেজিতে বলা হয় “Referendum”




