অ্যাপল তাদের সর্বশেষ AirPods Pro 3 মডেলে যুক্ত করেছে একটি চমকপ্রদ প্রযুক্তি: রিয়েল-টাইম ভাষান্তর। কানে পরা মাত্রই এখন অনায়াসে শোনা যাবে বিদেশি ভাষার অনুবাদ সরাসরি, বিলম্ব ছাড়া। এটি কেবল গ্যাজেটপ্রেমীদের জন্য নয়, বরং এমন একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যা বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বিভাজন দূরীকরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?
নতুন এই এয়ারপডসে অ্যাপলের নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (Apple Intelligence) ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী যখন কোনো বিদেশি ভাষা, যেমন স্প্যানিশ, শুনবেন তখন এয়ারপডসে থাকা ভার্চুয়াল সহকারী সেই কথাগুলো তাত্ক্ষণিকভাবে বাংলা বা ইংরেজির মতো পছন্দের ভাষায় অনুবাদ করে সরাসরি কানে শোনাবে।
পরীক্ষামূলকভাবে স্প্যানিশ, ফরাসি, জার্মান, পর্তুগিজ ও ইংরেজি ভাষা এখনই যুক্ত করা হয়েছে। অ্যাপলের ভাষ্য, ভবিষ্যতে আরও বহু ভাষা এতে যুক্ত হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি
নতুন iOS 26–এ আপডেটের পর AirPods‑ এর নিচের দুটি বাটন একসাথে চেপে ধরলেই Translate মোড চালু হয়। ব্যবহারকারী একটি নির্দিষ্ট ভাষা নির্বাচন করেন, এবং অপর প্রান্তে যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে, সেটি অনুবাদ হয়ে সরাসরি কানে পৌঁছে যায়।
চ্যাটের রেকর্ড বা লাইভ ট্রান্সক্রিপশনও iPhone‑এ দেখানো হয়, ফলে অনুবাদের নির্ভুলতা যাচাই করাও সহজ।
কেন এই ফিচার গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বব্যাপী অভিবাসী, পর্যটক, কিংবা ভিন্ন ভাষাভাষীদের সঙ্গে প্রতিদিন কাজ করা মানুষদের জন্য এটি একটি বাস্তব ও প্রাসঙ্গিক সমাধান। যেখানে আগে গুগল ট্রান্সলেট বা অন্য অনুবাদ অ্যাপগুলোতে ব্যবহারকারীকে ফোন এগিয়ে ধরতে হতো, সেখানে এখন অনুবাদ হচ্ছে সরাসরি কানে, স্বাভাবিক কথোপকথনের মতো।
বিশ্বের বহু অংশে- বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহর ও প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায়- এই প্রযুক্তি পারস্পরিক বোঝাপড়াকে সহজ করবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ও বাজার প্রতিক্রিয়া
অ্যাপলের এই পদক্ষেপকে অনেকে তাদের Generative AI দৌড়ে পুনঃপ্রবেশ হিসেবে দেখছেন। যেখানে গুগলের Gemini বা OpenAI‑এর ChatGPT অনেক এগিয়ে, সেখানে Apple‑এর এই ‘ইয়ার-ট্রান্সলেটর’ পদক্ষেপ বাজারে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০০ মিলিয়ন AirPods বিক্রি হয়েছে ইতোমধ্যেই, ফলে এই নতুন ফিচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে সময় নাও লাগতে পারে।
বিশ্ব যখন ক্রমেই পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, তখন ভাষাগত অন্তরায় একটি বড় বাধা। অ্যাপলের এই নতুন উদ্ভাবন সেই দেয়ালকে ভাঙার একটি বাস্তব, সহজলভ্য ও আধুনিক পদ্ধতি হতে পারে। যদিও এখনও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে AirPods Pro 3‑এর রিয়েল-টাইম ট্রান্সলেশন ফিচার স্পষ্টতই ভাষা ও প্রযুক্তির সংযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।