দীর্ঘ দুই দশক পর বাংলাদেশে আবারও দেখা দিয়েছে ভোটের উৎসবের প্রকৃত রূপ। চায়ের টং দোকান থেকে অফিসের করিডোর পর্যন্ত এখন আলোচনার মূল বিষয় ভোট, ভোট আর ভোট! রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে এক নতুন প্রাণচাঞ্চল্য, যেন গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে তার আসল রূপ।
স্বাধীন নির্বাচনের নতুন ভোর
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জুলাই বিপ্লবের পর প্রথমবারের মতো স্বাধীন পরিবেশে ভোটের আয়োজন- যা নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস সীমাহীন।
এক সময়ের বন্ধ, নিরুত্তাপ দলীয় কার্যালয়গুলো এখন সরগরম। তরুণরা ব্যস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণায়, প্রবীণরা দিচ্ছেন কৌশলগত পরামর্শ। ব্যানার-ফেস্টুনে রঙিন শহরজুড়ে প্রতিফলিত হচ্ছে ঢাকায় ভোটের উৎসব।
চায়ের টংয়ে ভোটের গল্প
বাংলাদেশের রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এই চায়ের আড্ডা। মিরপুরের এক চায়ের দোকানে মনির মিয়া বলেন, “ভাই, এবার কিন্তু মনের মতো ভোট দেব। কেউ এসে আর বলতে পারবে না ‘তোর ভোট দিয়ে ফেলছি।’”
পাশেই বসা তরুণ ভোটার রমজান আহমেদ যোগ করেন, “আমাদের প্রজন্ম আসলে কখনো ভোটই দিতে পারেনি। এবার মনে হচ্ছে সত্যিই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়ব।”
রাজধানীর প্রতিটি কোণে নির্বাচনি উত্তেজনা
ধানমন্ডি, পল্টন, গুলশান, বিজয়নগর থেকে শুরু করে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত সব জায়গাতেই চলছে ভোটের উৎসবের প্রস্তুতি। প্রার্থীদের ব্যস্ততা, মাইকে প্রচারণা, রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা সব মিলিয়ে ঢাকায় এখন নির্বাচনি উৎসবের আবহ।
ছোট দলগুলোর মধ্যেও চলছে বৈঠক, জোট গঠন আর কৌশল নির্ধারণের তৎপরতা। জনগণের মধ্যে কৌতূহলও তুঙ্গে- কে জোট বাঁধবে কার সঙ্গে, কে হবে আগামী সংসদের মুখ?
ভোটারদের আশা-ভরসা
রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার সোনিয়া বেগম বললেন, “গত দুই দশকে ভোট দিতে ভয় লাগত। এবার মনে হচ্ছে সত্যিই নিরাপদভাবে ভোট দিতে পারব।”
অন্যদিকে তরুণ ভোটার মেহেদি হাসান আবদুল্লাহর কিছুটা সংশয়, “উৎসবের আবহ ভালো লাগছে। কিন্তু ভোটের দিনটা কেমন যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাস
‘আমার ভোট, আমার অধিকার’, ‘আমার ভোট আমি দিব যাকে খুশি তাকে দিব’ এসব স্লোগান এখন ট্রেন্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায়। তরুণরা তৈরি করছে ভিডিও, মিম ও পোস্ট প্রচার করছে নিজেদের পছন্দের দলকে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বলছেন, এবারই তাদের জীবনের প্রথম ভোট, আর তারা চায় এই ভোট যেন সত্যিই গণতন্ত্রের নতুন সূচনা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, “ঢাকায় এই নির্বাচনি আমেজ কেবল শহরের সাজ নয়, এটি এক ধরনের মানসিক জাগরণও। মানুষ এখন ভোটের মূল্য বুঝতে শুরু করেছে, যা গণতন্ত্রের প্রাণ।”
তিনি আরো যোগ করেন, “দীর্ঘদিন পর মানুষ নিজের ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে। এই নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণই হবে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা।”
ঢাকায় ভোটের উৎসব কেবল একটি নির্বাচনি আয়োজন নয়- এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের প্রতীক। দীর্ঘ সময় পর মানুষ নিজের ভোটের অধিকার নিয়ে আশাবাদী, উদ্দীপ্ত ও ঐক্যবদ্ধ।
এবারের নির্বাচন প্রমাণ করবে- বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাণ এখনো স্পন্দিত, এবং জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক।




