আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, জুলাই সনদ, সংস্কার, এবং সর্বদলীয় সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।
জাতীয় নির্বাচনে জুলাই সনদের গুরুত্ব
রবিবার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন:“জুলাই সনদ থেকে বের হওয়ার কোনো পথ নেই। সবাইকে একমত হয়ে এই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, জাতিকে বদলে দেওয়ার এই সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে, যেখানে ক্ষুদ্র স্বার্থ বা মতভেদে আটকে না থেকে বড় উদ্দেশ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে হবে।
সংস্কার ছাড়া স্বৈরাচার রোধ সম্ভব নয়
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন,“ভবিষ্যতে যেন কোনো স্বৈরাচারী শক্তি আর ফিরে আসতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমাদের একটি শক্তিশালী সংস্কার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।”
তিনি বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে আমরা এমন একটি জাতি উপহার দিতে চাই, যা সুশাসন, ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।
সমঝোতার মাধ্যমেই শান্তির পথ
প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন,“যে সমঝোতার যাত্রা শুরু করেছি, তা থেকে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কিছু বিষয় হয়তো কষ্টদায়ক হতে পারে, কিন্তু দেশ ও জাতির শান্তির জন্য এটাই একমাত্র পথ।”
তিনি বলেন, বিতর্কে নয়, সমাধানে থাকতে হবে। বিতর্কের মধ্যে থেকে গেলে তা সমাজে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
“দৈত্য” দিয়ে হবে বড় কাজ!
প্রধান উপদেষ্টার ভাষায়,“জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা একটি আলাদিনের ‘দৈত্য’ তৈরি করেছি। একে দিয়ে আমরা যা করতে চাইব তাই করতে পারব এখন আমাদের ভাবতে হবে আমরা তাকে দিয়ে কি করতে চাই ছোট কাজ নাকি বড় কাজ। একে দিয়ে আমরা শক্তিশালী ব্যবস্থা তৈরি করে জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। এই ‘দৈত্য’ আবার কখনো তৈরি হবে না, তাই এখনই এর মাধ্যমে বড় কাজটি করতে হবে।”
তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রতিষ্ঠিত কমিশন ও প্রশাসনিক কাঠামোর মাধ্যমেই ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন পরিচালনার কাজ সম্পন্ন করা হবে।
জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ এর ফেব্রুয়ারিতেই, শুরু হবে উৎসব
ড. ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,“নির্বাচনের জন্য আমরা একটি হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি। এখন এই পথেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটা আমাদের জন্য উৎসবের শুরু।”
“নতুন জাতি” তৈরির সূতিকাগার হচ্ছে ঐকমত্য কমিশন
সভায় ড. ইউনূস বলেন,“আমরা এমনভাবে কাজ করব যেন এটি নিখুঁত হয়, এবং এখান থেকেই একটি নতুন জাতির জন্ম হয়। আমরা যেন নির্বাচনের পথে আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেতে পারি।”
সভায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভা পরিচালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন:
- আসিফ নজরুল – আইন উপদেষ্টা
- সালাহউদ্দিন আহমেদ – বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
- হামিদুর রহমান আযাদ – জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল
- আখতার হোসেন – এনসিপির সদস্যসচিব