দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে একটি নতুন নিয়োগ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, যা আগামী দিনে স্কুল-কলেজের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও মেধাভিত্তিক করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নতুন নির্দেশনা লাখো চাকরিপ্রার্থীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুখবর বয়ে আনবে।
চলুন, নতুন এই নির্দেশনার মূল কয়েকটি দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
সম্পূর্ণ ডিজিটাল আবেদন প্রক্রিয়া
এতদিন ধরে চলে আসা কাগজ-কলমের জটিল আবেদন প্রক্রিয়া এবার বিদায় নিচ্ছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সকল স্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন শুধুমাত্র অনলাইনে গ্রহণ করা হবে। এর জন্য shikkhok-niyog.gov.bd
নামে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টাল চালু করা হবে। এই পোর্টালের মাধ্যমে প্রার্থীরা তাদের আবেদন জমা দেওয়ার পাশাপাশি আবেদন ফি প্রদান, আবেদনপত্র ডাউনলোড এবং পরবর্তী প্রক্রিয়ায় আপডেট পেতে পারবেন। এতে করে সময় ও খরচ উভয়ই কমবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
নতুন যোগ্যতা ও বয়সসীমায় পরিবর্তন
প্রার্থীদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে কিছু নতুন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- আইসিটি দক্ষতা: সকল প্রার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে একটি বেসিক আইসিটি কোর্সে সার্টিফিকেট থাকতে হবে। এটি ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করবে।
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ: বিএড বা সমমানের ডিগ্রি থাকা প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন। যাদের নেই, তাদের নিয়োগের পর এক বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হবে।
- বয়সসীমা: সাধারণ প্রার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রতিবন্ধী কোটায় বয়সসীমায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিথিলতা থাকবে।
মেরিট-ভিত্তিক নিয়োগ ও বিতর্কিত প্রশ্নবিদ্ধতা দূরীকরণ
নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। নতুন নির্দেশনায় এই বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও মূল্যায়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) সম্পূর্ণ রেকর্ড করা হবে এবং স্কোরিং কার্ডে প্রত্যেক পরীক্ষকের স্বাক্ষর থাকবে। ফলাফল প্রকাশের সময় প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার স্কোর আলাদাভাবে উল্লেখ করা হবে, যা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
বিশেষ গুরুত্ব: বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ভাষা বিষয়ক শিক্ষক
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। সে কথা মাথায় রেখে নতুন নির্দেশনায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলোতে শূন্যপদ থাকলে তা দ্রুত পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। এই সেল নিয়োগ-সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটির কার্যক্রম ওই সেলের অধীনে থাকবে। এছাড়া, নিয়োগের সকল ধাপ ও ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
স্কুল-কলেজ নিয়োগের এই নতুন নির্দেশনা নিঃসন্দেহে শিক্ষা খাতকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীরা যাতে সঠিক মূল্যায়ন পান এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম বা বৈষম্য দূর হয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যারা ভবিষ্যতে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিতে চান, তাদের উচিত এখন থেকেই নতুন নিয়মাবলী অনুযায়ী নিজেদেরকে প্রস্তুত করে তোলা।