স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাস্তবে
স্কটল্যান্ড ফুটবল দল অবশেষে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। মঙ্গলবার রাতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ডেনমার্ককে ৪-২ গোলে হারিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করে স্কটিশরা। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ২-২ গোলে সমতায় থাকলেও যোগ করা সময়ে দুই গোল করে জয় নিশ্চিত করে তারা। স্কট ম্যাকটমিনের বাইসাইকেল কিক, লরেন্স শাঙ্কলান্ড, কিয়েরান টিয়েরনি এবং ম্যাকলিনের গোলে এই জয় আসে। গ্রুপ ‘সি’ থেকে ৬ ম্যাচে ৪ জয়, ১ ড্র ও ১ হারে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পায় স্কটল্যান্ড। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল স্কটল্যান্ড। স্টিভ ক্লার্কের অধীনে দলটি ধীরে ধীরে উন্নতি করে এবং ২০২০ সালের ইউরোতে ফিরে আসে। এবার বিশ্বকাপে ফেরার মাধ্যমে স্কটিশ ফুটবলের নতুন অধ্যায় শুরু হলো।
ডেনমার্কের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ম্যাচের নাটকীয়তা
ডেনমার্কের বিপক্ষে স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটি ছিল চরম নাটকীয়তায় ভরপুর। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই স্কট ম্যাকটমিনের দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকে এগিয়ে যায় স্কটল্যান্ড। প্রথমার্ধে ডেনমার্ক ১০টি শট নেয় কিন্তু গোলের দেখা পায়নি। বিরতির পর ৫৭ মিনিটে রাসমুস হয়লুন্দের পেনাল্টি গোলে সমতায় ফেরে ডেনমার্ক। ৭৮ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় লরেন্স শাঙ্কলান্ডের গোলে আবার এগিয়ে যায় স্কটল্যান্ড। কিন্তু চার মিনিট পরই প্যাট্রিক ডর্গুর গোলে ফের সমতায় ফিরে ডেনমার্ক। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ২-২ গোলে শেষ হলে মনে হচ্ছিল ডেনমার্ক বিশ্বকাপে যাবে। কিন্তু যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে কিয়েরান টিয়েরনির জোরালো শটে এগিয়ে যায় স্কটল্যান্ড। মিনিট পাঁচেক পর ম্যাকলিনের দৃষ্টিনন্দন গোলে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় তারা। এই জয়ের মাধ্যমে স্কটল্যান্ড ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে।
স্কটিশ ফুটবলের উত্থান ও পতনের ইতিহাস
স্কটল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাস উত্থান-পতনে ভরপুর। তারা আটবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে, কিন্তু ১৯৯৮ সালের পর আর কোনো বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল স্কটল্যান্ড। ব্রাজিল ও মরক্কোর কাছে হেরে এবং নরওয়ের বিপক্ষে ড্র করে তারা গ্রুপ পর্বেই ছিটকে যায়। এরপর একটানা ছয় বিশ্বকাপ ও পাঁচ ইউরোতে দর্শক হয়ে থেকেছে দলটি। স্টিভ ক্লার্কের অধীনে ২০২০ সালের ইউরোতে ফেরে স্কটল্যান্ড। এরপর সবশেষ ইউরোপ সেরার আসরে যোগ্যতা অর্জন করে। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তারা ডেনমার্কের সঙ্গে ড্র, বেলারুশের বিপক্ষে দুই জয় এবং গ্রিসের বিপক্ষে একটি জয় তুলে নেয়। যদিও গত সপ্তাহে গ্রিসের কাছে ৩-২ গোলে হারে ক্লার্কের দল। তবে স্বপ্ন বেঁচে ছিল তখনও। ডেনমার্ককে হারালেই সরাসরি কোয়ালিফাই করার সুযোগ ছিল, আর শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় স্কটল্যান্ড।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অন্যান্য দলের ফলাফল
স্কটল্যান্ড ছাড়াও আরও চারটি দল গ্রুপ সেরা হয়ে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে। তুরস্কের বিপক্ষে ২-২ ড্র করে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘ই’ গ্রুপের সেরা হয়ে লক্ষ্য পূরণ করেছে স্পেন। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ হওয়া তুরস্ক খেলবে প্লে-অফে। লিখটেনস্টাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে, ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ‘জে’ গ্রুপের সেরা হয়েছে বেলজিয়াম। নর্থ মেসিডোনিয়াকে ৭-১ গোলে হারিয়ে এই গ্রুপের রানার্সআপ ওয়েলস, ১৬ পয়েন্ট। এছাড়া ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘এইচ’ গ্রুপের সেরা হয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের জায়গা পোক্ত করেছে অস্ট্রিয়া। কসোভোর সঙ্গে ১-১ ড্র করে, ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের সেরা হয়েছে সুইজারল্যান্ড। ১১ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ কসোভো। ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইয়ে প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে। রানার্সআপ হওয়া দলগুলো খেলবে প্লে-অফে।
স্টিভ ক্লার্কের অধীনে স্কটল্যান্ডের পুনরুত্থান
স্টিভ ক্লার্কের অধীনে স্কটল্যান্ড ফুটবল দল ধীরে ধীরে তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাচ্ছে। ২০১৯ সালে স্কটল্যান্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ক্লার্ক দলকে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে শুরু করেন। তার কোচিংয়ে স্কটল্যান্ড ২০২০ সালের ইউরোতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে, যা ছিল ২৩ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো বড় টুর্নামেন্ট। এরপর সবশেষ ইউরোপ সেরার আসরেও যোগ্যতা অর্জন করে তারা। ক্লার্কের কোচিং ফিলোসফি হলো আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা এবং তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া। স্কট ম্যাকটমিনে, কিয়েরান টিয়েরনি এবং অ্যান্ডি রবার্টসনের মতো তারকাদের নেতৃত্বে স্কটল্যান্ড এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হচ্ছে। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তারা ডেনমার্কের সঙ্গে ড্র, বেলারুশের বিপক্ষে দুই জয় এবং গ্রিসের বিপক্ষে একটি জয় তুলে নেয়। যদিও গত সপ্তাহে গ্রিসের কাছে ৩-২ গোলে হারে ক্লার্কের দল। তবে শেষ পর্যন্ত ডেনমার্ককে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে স্কটল্যান্ড।
স্কটিশ ফুটবলের ভবিষ্যৎ প্রস্পেক্ট
স্কটিশ ফুটবলের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে স্কটল্যান্ড প্রমাণ করেছে যে তারা আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে এসেছে। স্কট ম্যাকটমিনে, কিয়েরান টিয়েরনি, অ্যান্ডি রবার্টসন এবং জন ম্যাকগিনের মতো তারকা খেলোয়াড়দের নেতৃত্বে স্কটল্যান্ড দল এখন অনেক বেশি সুসংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী। তরুণ খেলোয়াড়দের উত্থান এবং স্কটিশ প্রিমিয়ারশিপের মান উন্নতির ফলে দেশের ফুটবলের ভিত্তি আরও মজবুত হচ্ছে। স্কটিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও তরুণ প্রতিভাদের বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে স্কটিশ খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, যা ভবিষ্যতে তাদের আরও ভালো করতে সাহায্য করবে। এছাড়া বিশ্বকাপে খেলার মাধ্যমে দেশের যুব সমাজের মধ্যে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে, যা ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে সাহায্য করবে।
বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করলেও স্কটল্যান্ডের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। গ্রুপ পর্ব থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিতে হবে। স্টিভ ক্লার্কের অধীনে দলটি ইতিমধ্যেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, কিন্তু বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে তাদের আরও উন্নতি করতে হবে। স্কট ম্যাকটমিনে, কিয়েরান টিয়েরনি এবং অ্যান্ডি রবার্টসনের মতো তারকাদের পারফরম্যান্স দলের সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বিশ্বকাপের আগে স্কটল্যান্ডকে কয়েকটি প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রস্তুতি নিতে পারবে। এছাড়া বিভিন্ন ক্লাবে খেলা স্কটিশ খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও ফর্ম ঠিক রাখাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তবে স্কটল্যান্ডের সমর্থকরা আশাবাদী যে তাদের দল বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করবে এবং দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনবে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফেরার মাধ্যমে স্কটিশ ফুটবল নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে।
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: স্কটল্যান্ড কত বছর পর বিশ্বকাপে ফিরলো?
উত্তর: স্কটল্যান্ড ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরেছে। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল স্কটল্যান্ড।
প্রশ্ন ২: স্কটল্যান্ড কোন দলকে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে?
উত্তর: স্কটল্যান্ড ডেনমার্ককে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে।
প্রশ্ন ৩: স্কটল্যান্ডের হয়ে প্রথম গোলটি কে করেন?
উত্তর: স্কটল্যান্ডের হয়ে প্রথম গোলটি করেন স্কট ম্যাকটমিনে। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে তিনি দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকে গোল করেন।
প্রশ্ন ৪: স্কটল্যান্ড কোন গ্রুপ থেকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছে?
উত্তর: স্কটল্যান্ড গ্রুপ ‘সি’ থেকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছে।
প্রশ্ন ৫: স্কটল্যান্ড কত পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়েছে?
উত্তর: স্কটল্যান্ড ৬ ম্যাচে ৪ জয়, ১ ড্র ও ১ হারে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়েছে।
প্রশ্ন ৬: স্কটল্যান্ডের বর্তমান কোচ কে?
উত্তর: স্কটল্যান্ডের বর্তমান কোচ স্টিভ ক্লার্ক।
প্রশ্ন ৭: স্কটল্যান্ড সর্বশেষ কোন বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল?
উত্তর: স্কটল্যান্ড সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল।
প্রশ্ন ৮: স্কটল্যান্ড কতবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে?
উত্তর: স্কটল্যান্ড এখন পর্যন্ত নয়বার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে।
প্রশ্ন ৯: ডেনমার্কের হয়ে প্রথম গোলটি কে করেন?
উত্তর: ডেনমার্কের হয়ে প্রথম গোলটি করেন রাসমুস হয়লুন্দ। ৫৭ মিনিটে তিনি পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
প্রশ্ন ১০: যোগ করা সময়ে স্কটল্যান্ডের হয়ে দুই গোল কে করেন?
উত্তর: যোগ করা সময়ে স্কটল্যান্ডের হয়ে দুই গোল করেন কিয়েরান টিয়েরনি এবং ম্যাকলিন।
প্রশ্ন ১১: স্কটল্যান্ড ছাড়া আর কোন চারটি দল গ্রুপ সেরা হয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে?
উত্তর: স্কটল্যান্ড ছাড়া স্পেন, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড গ্রুপ সেরা হয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে।
প্রশ্ন ১২: স্কটল্যান্ড কোন গ্রুপে ছিল?
উত্তর: স্কটল্যান্ড গ্রুপ ‘সি’-তে ছিল।
প্রশ্ন ১৩: স্কটল্যান্ড কত বছর ধরে বিশ্বকাপের বাইরে ছিল?
উত্তর: স্কটল্যান্ড ১৯৯৮ সালের পর থেকে অর্থাৎ ২৮ বছর ধরে বিশ্বকাপের বাইরে ছিল।
প্রশ্ন ১৪: স্কটল্যান্ড কত ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে?
উত্তর: স্কটল্যান্ড ৬ ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে।
প্রশ্ন ১৫: স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ডেনমার্ক কত পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে?
উত্তর: স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ডেনমার্ক ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
প্রশ্ন ১৬: স্কটল্যান্ডের হয়ে কোন খেলোয়াড় বদলি নামার পর গোল করেন?
উত্তর: স্কটল্যান্ডের হয়ে লরেন্স শাঙ্কলান্ড বদলি নামার পর গোল করেন।
প্রশ্ন ১৭: স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কোন কোন দলের বিপক্ষে জয় পায়?
উত্তর: স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বেলারুশের বিপক্ষে দুই জয় এবং গ্রিসের বিপক্ষে একটি জয় পায়।




